Bangla News
কলকাতা মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর সন্ধ্যায় দমদম কেন্দ্রীয় কারাগার মাঠে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর সেই জনসভায় বাংলার শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করার পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে আরও একবার সরব হলেন তিনি।
দমদমের সভামঞ্চ থেকে মোদি সুর চড়িয়ে বলেছেন, ‘বাংলার অনুপ্রবেশকারীদের এতই বাড়বাড়ন্ত যে, তার জন্য রাজ্যের যুবকদের ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে। ’ তার কথায়, ‘বাংলায় অনুপ্রবেশকারীরা সামাজিক সঙ্কট তৈরি করেছে। ’ আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘মোদি বা বিজেপিকে ভেবে নয়, একবার ভোটদিন, সব অনুপ্রবেশ পালাতে শুরু করবে। ’
বাংলায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে জ্বলন্ত ইস্যু এখন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। এমন এক ইস্যু নিয়ে বাংলার শাসকবিরোধী দুই পক্ষই জনগনকে উত্তেজিত করছে। তার সঙ্গে সমান্তরালভাবে জড়িয়েছে বাংলা ভাষা! ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় চলছে।
বাংলার শাসক দলের কাছে প্রায়শই শোনা যাচ্ছে, ভারতের ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশি আটক ও পুশব্যাক করছে। এই নিয়ে শাসকদল আন্দোলনে নেমেছে। এমনকী সংসদ ভবনে আলোচনার ঝড়ও তুলেছে। তৃণমূলের দাবি, ভারতীয় হওয়ার সমস্ত নথি থাকা সত্ত্বেও কেবল বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই বাংলাদেশি সন্দেহে হেনস্থা করছে বাংলার বাঙালিদের। অপরদিকে কেন্দ্রর ক্ষমতাসীন দলের বার্তা, ভারতের ভিন রাজ্যে যারা ধরা পড়ছে তাদের অধিকাংশ নথি ভুয়া। জেরায় অনুপ্রবেশকারীরা স্বীকার করছে সেসব নথি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বানানো হয়েছে।
তবে এই আবহে ভোটার তালিকা সংশোধন (এসআইআর) বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। কারণ ভোটার তালিকা যাচাই ক্ষেত্রেও বহু এমন ভোটারের হদিশ মিলছে, যারা আদতে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নয়। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশিও ধরা পড়ছে। যখন এই ইস্যুতে তপ্ত বাংলা, তখন রাজ্যে এসে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সোচ্চার হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বাংলায় পরিবর্তন, বাংলায় বিজেপি সরকার আনার বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই এই চিন্তা আরো প্রকট হচ্ছে। কিন্তু দেশবাসী আর বেশিদিন অনুপ্রবেশকারীদের সহ্য করবে না। ’
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলোর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশে মদদ দেওয়া ও তোষণের অভিযোগ আনেন প্রধানমন্ত্রী। তার বক্তব্য, ‘ভারত নতুন প্রজন্মকে কর্মসংস্থান দিচ্ছে, তার দেশের নাগরিকদের সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু এই অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান কেড়ে নিচ্ছে, আমাদের অবকাঠামোর ওপরে প্রভাব ফেলছে, আমাদের মা-বোনেদের ওপর অত্যাচার করছে- এই অনুপ্রবেশকারীদের আমরা ভারতে থাকতে দেব না। সেই কারণেই ভারত সরকার অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু আমি হতবাক যে, জাতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বামসহ বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের রাজনৈতিকদলগুলো তোষণের রাজনীতির কাছে মাথা নোয়াচ্ছে। এই রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের মদদ দিচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, যে তারা অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী একটা রাজ্য। যেভাবে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে, তাতে সামাজিক সঙ্কট তৈরি করছে। কৃষকদের বোকা বানিয়ে তাদের জমি লুট করা হচ্ছে, আদিবাসীদের বঞ্চিত করে ওদের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভারত আর এসব আর সহ্য করবে না। এটাকে ঠেকাতেই হবে। এই কারণে স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ডেমোগ্রাফি মিশনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। যারা আমাদের মানুষদের রুটি, রোজগার ছিনিয়ে নিতে এসেছেন, যারা ভুয়া নথি দিয়ে ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে এদেশে রয়ে গেছে, তাদের এখান থেকে যেতেই হবে। আর এই কাজ সততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। এই কারণে তৃণমূলের সরকারকেও এ রাজ্য থেকে বিদায় নিতে হবে। ’
এরপরই তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর বাংলায় কংগ্রেস এবং বামেদের শাসন ছিল। এরপর পরিবর্তনের ডাক দিয়ে তৃণমূল এসছিল। কিন্তু সত্যিই কী পরিবর্তন হয়েছে? তৃণমূল গেলেই আসল পরিবর্তন আসবে। অনুপ্রবেশকারীরাও পালাবে।
ভিএস/আরবি