Google Alert – ইউনূস
নানামুখী চ্যালেঞ্জ, শঙ্কা ও ষড়যন্ত্রের চাপ সামলে এক বছর পার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময়ে সংস্কার কমিশন গঠন, ভঙ্গুর অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সম্প্রতি জুলাই সনদ এবং নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে বিগত এক বছর সরকারের পথচলা নির্বিঘ্ন ছিল না। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই সময়টি পার করতে হয়েছে এ সরকারকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা পক্ষের দাবির মিছিলে শ্লথ হয়েছে সরকারের অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি। এছাড়া নানা ধরনের চক্রান্তের মুখোমুখিও হতে হয়েছে। ফলে সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা, তার সার্বিক প্রতিফলন দৃশ্যমান হয়নি।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ‘মব’, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমেনি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। সুপরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় বাড়েনি বিনিয়োগও। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় উলটো বেড়েছে বেকারত্ব। মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ। বিগত সরকারের আমলে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থও ফেরত আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই এসবের প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনমুখী খাতগুলোতে। শিক্ষা খাতেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। প্রশাসনে কাঙ্ক্ষিত রদবদল না হওয়ায় বিগত সরকারের সৃষ্ট কুশীলবদের অনেকেই নিজ নিজ পদে আসীন আছেন।
উল্লেখ্য, বিগত সরকার পতনের পর রাষ্ট্র ও সমাজের বৈষম্য দূরীকরণ, মৌলিক সংস্কারসহ মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশার মধ্যে গত বছরের ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা মনে করি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে চলেছে। দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, তা পূরণে সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণের ঘোষণা মিলেছে। নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালাও হয়েছে চূড়ান্ত। রোজা শুরুর আগেই নতুন সরকার যাতে শপথ নিতে পারে, সে সময় হাতে রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চলছে ইসির কর্মযজ্ঞ। স্বভাবতই সেটি সম্ভব হলে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোট প্রয়োগের সুযোগ পাবে।
এটা সত্য, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যে আকাঙ্ক্ষা, তার কমই মিটেছে। জাতি হিসাবে নতুন নতুন সংকটের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। তবে স্বীকার করতেই হবে, দীর্ঘ ১৬ বছরের অনিয়মের জঞ্জাল সাফ করে রাতারাতি কাঙ্ক্ষিত সব প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে, এমন চিন্তাও বাস্তবসম্মত নয়। সবাইকে বুঝতে হবে-দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, গণহত্যার বিচার, ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারে জড়িতদের বিচারের মতো বিষয়গুলো সময়সাপেক্ষ। এসব বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি মিলবে তখনই, যখন গণতান্ত্রিক সরকার পূর্ণ উদ্যমে তাদের কাজ শুরু করতে পারবে। সে পর্যন্ত যার যার অবস্থান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতার পাশাপাশি জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে।