Google Alert – সামরিক
মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর জান্তার
সংগৃহীত ছবি
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নির্বাচন আয়োজনে পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় এখনও থাকছেন সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। আগামী ডিসেম্বরের মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। তার আগে দিয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে ডিক্রিবলে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে এবং নির্বাচন তদারক করতে একটি বিশেষ কমিশনসহ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। তবে জান্তা সরকারের এই পদক্ষেপে মিয়ানমারে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতায় কোনও পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায়নি। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের হোতা মিন অং হ্লাইং কার্যত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে সর্বময় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। কারণ, তিনি একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের দায়িত্বেও বহাল রয়েছেন।
এর আগে মিয়ানমারে প্রায় চার বছর পর জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার দেশটি থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় জান্তা সরকার। ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ-সংক্রান্ত একটি লিখিত আদেশ জারি করেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে এক অডিও বার্তায় জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পথ সুগম করতে পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন।’
ইতিমধ্যে প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জনের কথা জানিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও চলমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগের সমালোচনা করছে। জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন সাংবাদিকদের ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে জানান, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে। এই লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। সে সময় নোবেলজয়ী অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নেয় তারা। এরপর থেকেই দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির সময় দেশটির সর্বময় কর্তৃত্ব সামরিক বাহিনী প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি একই সঙ্গে আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতার অধিকারী হন। তবে সম্প্রতি তিনি সংঘাত নিরসনের পন্থা হিসেবে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি বারবার সামনে নিয়ে আসছেন।
সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভ্যুত্থানের সময় ক্ষমতাচ্যুত নেতা ও অন্যান্য বিরোধী নেতাকর্মীরা আসন্ন নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনা করছে। গত মাসে জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ এই নির্বাচনকে ‘প্রহসনমূলক’ ও সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চক্রান্তের অংশ হিসেবে আখ্যা দেন।
সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে ওয়াশিংটন। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং চলতি মাসের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রশংসাসূচক চিঠি পাঠানোর পর তা তুলে নেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস। ক্ষমতাসীন জেনারেলের মিত্র ও সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে তিনি ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতী এই তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে টম অ্যান্ড্রুস জানান, সামরিক বাহিনীকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অস্ত্র ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার এই মার্কিন নীতি ‘বিস্ময়কর’। এতে জান্তা ও তাদের সহযোগীরা আরও সাহসী হয়ে উঠবে। তার ভাষ্য, গণহত্যাকারী জান্তার হাতে যাতে আরও অস্ত্র না আসে, তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক মহল বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বিপরীত দিকে হাঁটার সমতুল্য।
মিয়ানমারের অস্ত্র ব্যবসায়ী ও জান্তার সহযোগীদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার (আন্তর্জাতিক মহলের) ওই উদ্যোগের অবমাননা করছে। এর পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান অ্যান্ড্রুস রিপাবলিকান পার্টি ও ট্রাম্প প্রশাসনকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এটি জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার।’
এদিকে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে নিষ্কণ্টক রাখতে ইতিমধ্যে বিশেষ নির্বাচনি আইন প্রণয়ন করেছে জান্তা। গত বুধবার ঘোষিত এই আইনে ‘নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে ধ্বংস’ করতে পারে এমন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বা বক্তব্য রাখার দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এমএইচ