Samakal | Rss Feed
অভিযোগপত্রে নাম এলে ভোটে অযোগ্য
বাংলাদেশ
সমকাল ডেস্ক 2025-09-05
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হলেই তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। জনপ্রতিনিধি হয়ে থাকলে তিনি আর বহাল থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া সরকারি পদ বা দায়িত্বে থাকার অযোগ্য হবেন। এই বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। এর ফলে তারা স্বতন্ত্রভাবেও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩-এ সেকশন ২৩ যুক্ত করা হয়েছে। নতুন সংযোজিত ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের সেকশন ৯-এর ১-এর অধীনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। একইভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার অযোগ্য হবেন। এমনকি প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া বা অন্য কোনো পাবলিক অফিসে অধিষ্ঠিত হওয়ারও অযোগ্য হবেন।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। তিন আসামির মধ্যে তিনি কারাগারে আটক আছেন। অন্য দুজনকে পলাতক দেখিয়ে গত ৪ আগস্ট থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি অনুমোদন
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি গতকাল উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হয়েছে। এই পলিসির খসড়া পর্যালোচনায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে সভাপতি করে গত ২০ জুলাই একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির সদস্য ছিলেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নীতিমালার খসড়া স্বল্প সময়ে পর্যালোচনা করে সুচিন্তিত অভিমত দেওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদ এই কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, নতুন এ নীতিমালার ফলে বিদ্যমান লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় থাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। নতুন একটি লাইসেন্সিং ব্যবস্থা; দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে মানসম্মত সেবার নিশ্চয়তা এবং প্রতিযোগিতামূলক টেলিযোগাযোগ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে ভয়েস কল এবং ডেটা, অর্থাৎ ইন্টারনেট ও ডেটাকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে নিয়ে আসার একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সূচিত হয়েছে।
নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে আইওএফ-এর প্রতিক্রিয়া
নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে আইওএফ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম)-এর প্রেসিডেন্ট সিরাজ রব্বানী বলেন, এখনও এই খাতে সামান্য যেটুকু ব্যবসা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে, সেটিও বিদেশিদের কাছে তুলে দেওয়ার আলামত আমরা লক্ষ্য করছি। এই খাতে বিদেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরগুলোর নিরঙ্কুশ দাপট। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে কার্যত তাদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। যেসব খাতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা রয়েছে সে সব ব্যবসা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। তিনি বলেন, ‘শুধু আইজিডব্লিউ খাতেই আমাদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। অনেক দক্ষ প্রযুক্তিবিদ আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। এ পর্যন্ত আমরা বিটিআরসিকে সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। অথচ নতুন নীতিমালা কিংবা বিধিবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে খুব একটা সমন্বয় করা হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক।’
সৌরবিদ্যুতের দাম ও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমবে
বেসরকারি অংশগ্রহণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন/বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনতে পারবে এবং বাকি বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা যাবে। এতে সৌরবিদ্যুতে বেশ বড় আকারে বিনিয়োগ হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে। দেশে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ নীতিমালা ছিল, সেটিকে বিগত সরকার শুধু লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। গত বছর ৬৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। ভর্তুকি কমিয়ে আনতে এবং মানুষের জন্য বিদ্যুৎ খাতে খরচ কমাতে এই নীতিমালা করা হয়েছে। কোম্পানি বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য সরকারের যে সঞ্চালন লাইন আছে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এজন্য তাদের চার্জ দিতে হবে। এই চার্জ নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
সংস্কারের ৫০টি সুপারিশ বাস্তবায়িত
প্রেস সচিব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জানানো হয়েছে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে ৫০টি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে। ৩৭টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং ২৮০টির মতো প্রক্রিয়াধীন আছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে উপদেষ্টারা তাদের মতো করে অনেক সংস্কার কাজ করেছেন। তাদের কাজের তালিকা দীর্ঘ। সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে তার কয়েকগুণ বেশি কাজ মন্ত্রণালয়গুলো স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করেছে। সামনের দিনগুলোতে এগুলো প্রকাশ করা হবে।