Google Alert – ইউনূস
উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে অন্তবর্তী সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরে তিনি এ আহ্বান জানান।
শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে বিশ্ব নেতাদের সামনে দ্বিতীয়বারের মত ভাষণ দেন ইউনূস।
সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরার সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে আমাদের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
“আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ‘দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া’ পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার যে সম্ভব নয়, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধি বিধানগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়— এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। আমি উন্নয়নশীল দেশ হতে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধি বিধান প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের প্রস্তাব করছি।”
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের অগাস্টে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনাবসান হয়। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর চেষ্টায় অন্তবর্তী সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে বৈঠক করেছে দুদক।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে গত ডিসেম্বরে দাখিল করা শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে গড়ে প্রতি বছর ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ‘পাচার’ হয়েছে।
জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা একে একে আবিষ্কার করি দুর্নীতি ও জনগণের সম্পদ চুরি কি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কি ভয়ানক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল।
“আমরা এর অবসান ঘটাচ্ছি যেন আর কখনোই উন্নয়নকে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না যায়। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত করতে আমরা সংস্কারমূলক কিছু কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।”