Google Alert – সেনাবাহিনী
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে বেপরোয়া অপরাধ। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কিছু সদস্যও ছিনতাই, অপহরণ করে অর্থ আদায়, লুটসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ভুক্তভোগীরা কিছু বোঝে ওঠার আগেই বাসাবাড়িতে ডাকাতি, অপহরণ কিংবা জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি চক্রেই রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের চাকরিচ্যুত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। তারা র্যাব, ডিবি এমনকি সেনাসদস্য পরিচয়ে এসব অপরাধ করছেন। আবার অনেক প্রতারক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেজে মানুষকে জিম্মি করে অর্থকড়ি লুটে নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ অপরাধে জড়ালে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অক্টোবর থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫৫টি ডাকাতি ও প্রায় সাড়ে ৩শ ছিনতাইয়ের মামলা রেকর্ড হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে অন্তত ৬টি ডাকাতির ঘটনায় ৩৮ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং তাদের সোর্স। এদের মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু রাজধানীই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব চক্রের সঙ্গে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন ইউনিটের চাকরিচ্যুত সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছেন। এই অপরাধীরা বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক হওয়ায় একজন পুলিশ বা র্যাব সদস্য কীভাবে আচরণ করে, তাদের অ্যাপ্রোচ কেমন হয়, তা তাদের জানা। ডিবি বা র্যাবের জ্যাকেট বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে। সঙ্গে থাকে ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও আগ্নেয়াস্ত্র। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো পাওয়া যায় ভুয়া। এতদিন ডিবি বা র্যাবের পরিচয়ে ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনাগুলো ঘটলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাকে প্রায়ই ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
২৯ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে বনানী এলাকায় ডিবি পরিচয়ে এক লন্ডন প্রবাসীর গাড়ি আটকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে ২০ জুলাই বিকালে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় বোরহান উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বাসায় সেনাবাহিনীর পরিচয়ে একটি চক্র হানা দেয়। তারা একটি প্রাইভেটকারে ওই বাসায় যান। বাসার মালিককে না পেয়ে তারা মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে ব্যাগে ভরে নিয়ে পালিয়ে যান। এরই মধ্যে খবর পেয়ে এনডিসি চেকপোস্টের কাছে তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাদের পল্লবী থানায় হস্তান্তর করা হয়। পল্লবী থানার ওসি জানান, গ্রেফতার ৫ জনের মধ্যে দুজন সাবেক সেনাসদস্য। একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট ফিরোজ ইফতেখার। অপরজন অবসরপ্রাপ্ত করপোরাল মুকুল। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক ফিরোজ ইফতেখার ‘জাস্টিস ফর কমরেডস’ নামের একটি সংগঠনের সদস্য। অন্যদিকে করপোরাল মুকুল ‘সহযোদ্ধা’ নামের একটি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত, যা সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত বা অসন্তুষ্টদের নিয়ে গঠিত।
এর আগে ১৪ জুন উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ ও ১৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে র্যাবের পোশাকে নগদ ডিস্ট্রিবিউটরের দুই কর্মীর কাছ থেকে এক কোটি ৮ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটলেও এগিয়ে যাননি কেউ। পরে তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় নগদ ২২ লাখ টাকা। এ ডাকাতিতে জড়িতরা চাকরিচ্যুত পুলিশ ও সেনাসদস্য। ২৬ মার্চ ভোরে যৌথ বাহিনী সেজে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে ৩৬ লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ১১ সদস্য জড়িত। তাদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছেন। ১১ জানুয়ারি গুলশানের একটি বাসা থেকে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩৪ লাখ টাকা লুট করা হয়।
একই মাসে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের উলটো পাশে এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর এক কোটি টাকা লুট হয়। এই দুই ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
গত বছরের ১২ অক্টোবর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনী সেজে একটি বাসা থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৭৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত এক লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১১ সদস্য ও তাদের সোর্সের নাম আসে। এদের মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত থাকায় কথা বলতে ভয় পান ভুক্তভোগীরা।
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, এই শ্রেণির অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা আরও চ্যালেঞ্জের। এমন ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেনি, বহু আগে থেকেই ঘটছে। তবে গত ১০ মাসে এমন অপরাধের সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসাবেই গণ্য করি। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাহিনীর কোনো সদস্য অপরাধে জড়াচ্ছে কিনা, তাও নজরদারি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কেউ অভিযানে গেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে কাছের থানায় জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।