আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না: সালাহউদ্দিন

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) গোড়া আরেক জায়গায়। তারা মরিয়া প্রমাণ করিলো তাদের গোড়া কোন জায়গায়। তারা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। তারা কোনোদিন বাংলাদেশিদের জন্য রাজনীতি করেনি।

 

শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী প্রসঙ্গ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বহু বছর ধরে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে জাতীয় আন্তর্জাতিক কোনো রকম ষড়যন্ত্র যাতে সফল হতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কুকি চিনসহ সাম্প্রতিককালের কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি দেশের সশস্ত্র বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও গবেষকসহ সকল মহলকে সচেতন থাকার আহবান জানান।

 

তিনি বলেন, কুকি চিনের ঘটনার পেছনে কিংবা পর্দার অন্তরালে অনেক কারণ আছে। আমাদের পার্বত্য অঞ্চল, ভারতের একটি অঞ্চল এবং মায়ানমারের একটি অঞ্চল নিয়ে হয়ত একটি পরিকল্পনা, আবার আরেকটি হলো এই অঞ্চল নিয়ে বৈশ্বিক কোনো কোনো শক্তির পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই খণ্ডটাকে হয়তবা তারা অন্যভাবে সাজাতে চায়। সেজন্য আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এ রকম যেকোনো পরিকল্পনা সফল হতে না পারে।”

 

এই বিএনপি নেতা বলেন, দেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সব নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি, আধা উপজাতিসহ সবাইকে বাংলাদেশি হতে হবে। অখন্ড বাংলাদেশ ও সবাই বাংলাদেশি এই পরিচয়কে ধারণ করতে হবে।

 

তিনি বলেন, আমরা সবাই যদি অখণ্ড বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, আমরা যদি একই সংবিধানে বিশ্বাস করি, আমরা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখণ্ডতাকে বজায় রাখতে চাই, তাহলে আমাদের সবাইকে বাংলাদেশের সিটিজেন হিসেবে সংবিধানিক অধিকার ধারণ করতে হবে।

 

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐক্যবদ্ধ জাতি, ঐক্যবদ্ধ সমাজ ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্যই আমরা একাত্তরের পরে চব্বিশে আবারো রক্তদান করেছি।

 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে। সবাই হয়ত সশস্ত্র সংগ্রামে সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি। তবে তারা মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল বলে যাদেরকে আমরা বিভক্ত করতে চাই, তাদের মধ্যেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশকে অস্বীকার করার মতো প্রকাশ্য মানসিকতা আমরা দেখিনি। যারা হয়ত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে গ্রহণ করতে পারেনি, তাদের মধ্যে কিছু কিছু ভিন্ন চিন্তা থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার মতো বক্তব্য দিয়ে সে রকম দুঃসাহস বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কেউ দেখায়নি। আমরা মনে করি স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করা কাম্য হতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে আমরা এটি কেউই আশা করতে পারি না।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশা, এবং ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা, শহীদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা হলো- আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যাব। এই জাতির একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে সাম্য, মানবিক মর্যাদাভিত্তিক ও সামাজিক সুবিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ। যার মধ্য দিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে এবং সেই লক্ষ্যেই আমরা রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের জন্য অবিরাম চেষ্টা করছি।

 

গোল টেবিল বৈঠকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও দেশের বিশিষ্টজনেরা আলোচনায় অংশ নেন। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) ড. মো. নাঈম আশফাক চৌধুরী।

 

অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর শাহজাহান চৌধুরী, ওসমানী সেন্টার ফর পিস এন্ড সিকিউরিটি স্ট্যাডিজের চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব.) ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, বিএনপি মিডিয়া সেলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আলমগীর মোহাম্মদ মওদুদ, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কাজী মোহাম্মদ বরকত আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তারেক ফজল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. আবদুল্লাহ আল ইউসুফ, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু রুইথি কারবারী, ইঞ্জিনিয়ার চিং মং শাক, ছাত্রনেতা পাইশিখই মারমা প্রমুখ।

 

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। সেমিনারের শুরুতে সংক্ষিপ্ত স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্যনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ ইবনে রহমত। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন পার্বত্যনিউজের সিনিয়র রিপোর্টার নজরুল ইসলাম বশির।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *