Amarbangla Feed
আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে গতি আসতে পারে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সরকারি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতির আহ্বান জানানো হবে। এ বিষয়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই ইসির কাছে বার্তা পাঠানো হবে।
এদিকে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে ‘জুলাই সনদ’ তৈরির কাজ চলছে, সেটির খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ করা হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সোমবারের মধ্যে জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোকে পাঠানো হবে। সনদ সইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করা হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘সনদের খসড়া নিয়ে সংলাপে আলোচনা করা হবে না। যদি মৌলিক কোনো আপত্তি আসে, তখন বিবেচনা করা হবে। তবে সনদের ভূমিকা ও অঙ্গীকারপত্রে দলগুলোর মতামত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
একাধিক দলের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের আগে আয়োজনের দাবি ও সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে ভোট চাওয়ার বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।
গত ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগেই, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
যদিও বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রতি কোনো নির্দিষ্ট বার্তা না যাওয়ায় বিএনপির ভেতরে সংশয় সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে নতুনভাবে পিআর পদ্ধতির মতো ইস্যু উত্থাপনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ২২ জুলাই থেকে তিন দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ২৬ জুলাইয়ের আলোচনায় ১৪টি দল ও জোট অংশ নেয়।
বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি আগামী চার–পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ও তারিখ ঘোষণা করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যে অরাজকতা চলছে, এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে নির্বাচন—এটা সরকার বুঝতে পেরেছে।’
বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দারের এই বক্তব্য নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং যে লিখিত বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছে, তাতে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার কোনো ইঙ্গিত ছিল না। বরং দেশবিরোধী অপচেষ্টা রুখতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ইউনূস।
জামায়াতে ইসলামীও বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আসলেই কী বলেছেন, সেটা আমরা নিশ্চিত নই। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাও এখনই তারিখ নির্ধারণ করা অপরিপক্বতা। প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বিচার না করে তারিখ ঘোষণা হলে সেটা হবে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো।’
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়ে গেলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় আপত্তির কিছু নেই।’
বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রোববার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যদি দুই–চার দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেন, আমরা খুশিই হব। কারণ এটাই তো আমাদের দাবি।’
সর্বোপরি, রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে যে, সরকার চায় জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ে তুলতে এবং প্রক্রিয়া অগ্রসর করতে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা দিয়ে একটি স্পষ্ট সংকেত দিতে।
আমারবাঙলা/এফএইচ