Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম
দেশের প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনাকে ‘বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ’ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচারের জন্য মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান এসেছে ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনায় সভায়।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ‘আইপিনিউজ বিডি’র উদ্যোগে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “আদিবাসী বললে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে দেশ ভাগ হবে না। গণমাধ্যম এ বিষয়ে গণমানুষকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সহ-সাধারণ সম্পাদক হেলেনা তালাং বলেন, “যেখানেই বন সেখানেই আদিবাসী। দেশের জীববৈচিত্র্য, বনভূমিগুলো রক্ষা করার জন্য হলেও আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে লিখুন। কেননা আদিবাসীরাই দেশের বেশীরভাগ বনভূমি ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে চলেছে।”
সভার শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইপিনিউজের যুগ্ম-সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা। তিনি বলেন, “গত ১৫ জানুয়ারী আদিবাসী শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি পাঠ্যপুস্তকে ছাপানো এবং সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ঢাকার রাজপথে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর সংগঠিত ন্যক্কারজনক হামলারও কোনোরূপ বিচার এখন অবধি হয়নি।
“আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরীহ আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন এবং ধরপাকড়ের হার বাড়িয়েছে। গত বছরের এপ্রিল মাসের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নিরপরাধ বমদের এখনো জেলের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। বিচার বহির্ভূতভাবে ইতিমধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনজন নিরপরাধ বমকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।”
সমতলের আদিবাসীদের উপরও ‘নিপীড়ন, নির্যাতন ও ভূমি বেদখলের’ ঘটনা বেড়েছে মন্তব্য করে অমর শান্তি চাকমা বলেন, “গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্চ-বাগদা ফার্মের সাঁওতাল আদিবাসীদের জমি বেদখলের উদ্দেশ্যে সরকার ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং এলাকায় খাসিয়াদের পানজুমের প্রায় ২ হাজার পান গাছ কেটে দেওয়া হয়েছে।
“মধুপুর অঞ্চলের গারো জনগোষ্ঠী ক্রমাগত ভূমি বেদখলের শিকার হচ্ছেন। ইকোপার্কের নামে তাদের চিরায়ত ভূমি বেদখলের অপচেষ্টা চলমান রেখেছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল।”
আদিবাসীদের ওপর সংঘটিত এ সমস্ত ঘটনাগুলোর প্রচার ও প্রকাশে মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোকে ‘প্রায়শই প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা’ পালন করতে দেখা যায় মন্তব্য করে অমর শান্তি চাকমা বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংবাদগুলো প্রকাশ করা হলেও তা বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে না ধরে প্রকৃত ঘটনাগুলোকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়।”
এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন, উন্নয়ন সংস্থা অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি ইউজিন নকরেক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের শিক্ষা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক উজ্জল আজিম, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি ড. ফিলিমন বাস্কে, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান উপস্থিত ছিলেন।
আইপিনিউজ বিডির সম্পাদক আন্তনী রেমার সভাপতিত্বে সঞ্চালনায় ছিলেন নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।