আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে এখনও দূরে ফিলিস্তিন

Jamuna Television

প্রথম ফ্রান্স, তারপর যুক্তরাজ্য এবং সম্প্রতি কানাডা—বিশ্বের তিনটি শক্তিশালী পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দাবিতে তাদের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক শক্তি যুক্ত করে বাড়াচ্ছে চাপ। ইতিমধ্যে ১৪০টিরও বেশি দেশ এই ধারণাকে সমর্থন জানিয়েছে।

এই পদক্ষেপগুলোর পেছনে বিভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে—ইসরায়েলের প্রতি হতাশা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ বা গাজায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি দেখে বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া ক্ষোভ। কারণ যাই হোক, ফিলিস্তিনিরা এই ঘোষণাগুলোকে তাদের সংগ্রামের জন্য একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সরকার এই দাবিগুলোকে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার শামিল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ক্রমশ হতাশ হচ্ছেন, বিশেষত গাজায় দুর্ভিক্ষ নিয়ে।

নেতানিয়াহু এই দুর্ভিক্ষের কথা অস্বীকার করলেও, পরিস্থিতি ট্রাম্পকে বিচলিত করেছে। ট্রাম্প আঞ্চলিক শান্তি চান এবং এর মাধ্যমে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মতো স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী।

তিনি চান সৌদি আরব যেন ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। কিন্তু রিয়াদ স্পষ্ট জানিয়েছে যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের একটি অপরিবর্তনীয় রোডম্যাপ ছাড়া এটি সম্ভব নয়।

ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ—যদিও অনেকাংশে প্রতীকী; ওয়াশিংটনকে ইসরায়েলের সমর্থনে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান আনতে পারে, যেখানে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে ৬০,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এছাড়াও, এটি গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তিতেও সহায়ক হতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই রাষ্ট্রটি কেমন হবে তা কল্পনা করা। কারণ আধুনিক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কখনই অস্তিত্বশীল ছিল না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হলে দ্রুত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য সেই সময়টি ‘আল-নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়’ হিসেবে স্মরণীয়—যখন লাখো মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এরপর ১৯৬৭ সালের ‘ছয় দিনের যুদ্ধে’ ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে নেয়।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি ভূমি ক্রমশ সংকুচিত ও বিভক্ত হয়েছে।

১৯৯০-এর দশকের ‘অসলো চুক্তি’ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সবচেয়ে কাছাকাছি একটি রূপরেখা দিয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৬৭-এর সীমানাকে ভিত্তি করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল, যেখানে কিছু ভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েলি বসতিগুলো সরানো হতো।

তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইৎজাক রাবিন ও ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের মধ্যে করা চুক্তি আধুনিক কূটনীতির একটি সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হয়। কিন্তু ১৯৯৫ সালে এক জঙ্গির হাতে রাবিন নিহত হলে শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়।

অসলোর কাঠামোর বাস্তবে কোনো অগ্রগতি নেই। ইসরায়েলি সরকারের উৎসাহে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতিগুলো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, যা একটি সংযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এছাড়া, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কে শাসন করবে সে প্রশ্নও রয়েছে। পশ্চিম তীরের কিছু অংশ শাসনকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অনেক ফিলিস্তিনিই দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করে।

এই জটিলতাগুলো ছাড়াও, নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন, যাকে তিনি ‘ইসরায়েল ধ্বংসের সিঁড়ি’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য আরও চরমপন্থী, যারা শুধু স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরোধীই নন, বরং এই অঞ্চলকে ইসরায়েলের সাথে যুক্ত করতে চান।

নেতানিয়াহুর সমর্থনকারী কিছু মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন যে তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার বদলে ক্ষুধার্ত রাখতে চান। এমনকি নেতানিয়াহু যদি আন্তর্জাতিক চাপ মেনে নেওয়ার ইঙ্গিতও দেন, তাহলে তারা জোট সরকার ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।

নেতানিয়াহু পিছু হটতে নারাজ, এবং ফ্রান্স, ব্রিটেন বা অন্য কোনো দেশের চাপকে তিনি ‘সম্মানের ব্যাজ’ হিসেবে দেখছেন। ইসরায়েলি সরকারের কোনো সহযোগিতা ছাড়া ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্থহীন হবে, বরং এটি নেতানিয়াহুর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান চাপ ট্রাম্পকে তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলই রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়তে পারে, যতই তারা প্রতিবাদ করুক না কেন।

সূত্র: সিএনএন নিউজ।

/এআই

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *