Bangla Tribune
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পুলিশ যেন আর কখনোই কোনও আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেআইনি সমাবেশে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের স্বীকৃত পাঁচটি ধাপ অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরাচার আমলে দলীয় বাহিনীতে পরিণত হওয়া ভঙ্গুর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন যাতে না ঘটে, সেজন্য পুলিশ সদর দফতরে একটি ‘সেল’ কার্যকর করা হয়েছে। যেখানে মানবাধিকারসহ পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে সংঘটিত যেকোনও অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ করা যায়। এ সব ‘সেল’ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয়েও স্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ-সহ যেসব কাজ এ সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে করে যেতে পারবে, সেসব কাজের বেশিরভাগ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়ে গেছে, বাকি কাজ চলমান রয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ হবে স্বচ্ছ কাচের ঘরে। হাজতখানায় বন্দিদের মানবিকসেবা নিশ্চিত করা হবে, অভিযান পরিচালনার সময় পুলিশ যেন জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ডিভাইসসহ বডি-ক্যামেরা পরিধান করে, তা নিশ্চিত করা হবে। সব মিলিয়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ১৬টি সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৪৩টি সংস্কার কাজ সমাপ্ত হওয়ার পথে।
তিনি বলেন, দেওয়ানি আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ বিভিন্ন আইনগত সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে। এর ফলে এখন থেকে কোনও ব্যক্তিকে আটকের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব— পরিবারকে জানাতে হবে। আটককৃত ব্যক্তিকে আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি রিমান্ডের পর অসুস্থ বা আহত হলে তাকে ডাক্তার কর্তৃক পরীক্ষা করতে হবে এবং আঘাতের কারণ নিশ্চিত হতে হবে। তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের দায় থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই আইনের ফলে গ্রেফতার ও আটক নিয়ে মানুষের হয়রানি অনেক কমে আসবে, পুলিশের জবাবদিহি বাড়বে এবং বিচারের কাজ দ্রুততর হবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল— কোনও ব্যক্তি থানায় জিডি করতে গেলে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। জিডি গ্রহণ করা ছাড়া থানা থেকে কোনও ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। এই সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের সব থানায় অনলাইনে জিডি করা যাবে। এখন থানায় জিডি না নেওয়ার আর কোনও অভিযোগ থাকবে না।