চ্যানেল আই অনলাইন
এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারপার্সন গোলাম মোস্তফা বলেছেন, জুলাই আন্দোলন শিখিয়ে দিয়েছে, আন্দোলন অবরোধ করে রাস্তায় নামলেই দাবি আদায় করা যায়।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক রাজু আলীমের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হল-
প্রশ্ন: দেশের ভবিষ্যৎ কী?

উত্তর: আমি মনে করি দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আঠারো কোটি দেশের লোক, যে দেশে সশস্ত্র সংগ্রাম করে একটা অকুপাইড আর্মির বিপক্ষে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে নয় মাসে। সে দেশ কেউ দাবায় রাখতে পারবে না, আমার দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
প্রশ্ন: অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী?
উত্তর: আমাদের যে গণআন্দোলন হলো, এর মুখ্য উদ্দেশ্যই ছিল, ছেলেমেয়েদের চাকরির সুব্যবস্থা করা। সেটা সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক। যাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রতি বছর প্রায় ছাব্বিশ লক্ষ ছেলেমেয়ে জব মার্কেটে আসতেছে। আঠারো কোটি দেশের লোক যদি সমস্যা না থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে এই সমাজ নেই কারণ মৃত লাশের কমপ্লিন নেই।
মানুষ যখন জীবিত থাকে তখন বলে মাথাব্যথা করে, ঘাড়ে ব্যথা করে তখন বলে আমার মন ভালো নেই, অর্থাৎ বেঁচে থাকলে অনুভূতি থাকবে সমস্যা বা অভিযোগ থাকবে। এরপরেও বলবো আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের এক্সপোর্টের গ্রোথ অল্প হলেও আছে। কিন্তু নতুন কোনো ইনভেস্ট নেই, আমাদের টাকার সাথে ডলারের ভারসাম্য ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশরে জন্য হান্ড্রেড প্লাস বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করা দরকার আমাদের।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভিয়েতনাম তারা চারশো মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করে। গার্মেন্টেসে আমরা থার্টি এইট বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করি, এর আগে আমরা বায়ান্নো বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করেছি। সরকারি হিসেবে হেরফের আছে, এখন কমেছে কিনা জানিনা।
আমি মনে করি, ভিয়েতনাম থেকে স্যামস্যাং যে কোম্পানি বাংলাদেশে এসেছিলো ফ্যাক্টরি করার জন্য, তারা সিক্সটি ফাইভ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করে, সেভেনটি ফাইভ বিলিয়ন ডলার প্রোডাকশন করে এখান থেকে। আমরা দুই ডলার থেকে ছয়/সাত ডলারে টিশার্ট-সোয়েটার-প্যান্ট দরে বিক্রি করে চার-পাঁচশো বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করা খুব ডিফিকাল্ট। তাই আমরা যদি স্যামস্যাং এর মতো, এলজি, এ্যাপেল এই সব বড় বড় কোম্পানির প্রোডাকশন করে এক্সপোর্ট করতে পারি দেশে, এ ধরনের বড় বড় কোম্পানি এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ইন্ডাস্ট্রিজ যদি আমরা নিয়ে আসতে পারি বাংলাদেশে তাহলে পাঁচশো থেকে হাজার বিলিয়ন ডলার বা তারও অধিক এক্সপোর্ট করার সক্ষমতা তৈরী হবে।
এছাড়া আমার যে প্রবাসী ভাইবোনেরা আছে তারা সবাই কিন্তু কন্ট্রিবিউট করছে অর্থনীতিতে, কিন্তু সেটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতো শতাংশ, খুব বেশি না।
বাংলাদেশের বিজনেসম্যান হিসেবে উই ফিল প্রাউড, আঠারোটা ইন্ডাস্ট্রিজ পঁচিশ হাজার লোকের চাকরি দিয়েছি, সকালবেলা থেকে এ পর্যন্ত একবার খেয়েছি, রাতের বেলা দুইট রুটি একটা কলা এক গ্লাস জুস খাই। বাংলাদেশকে আমরা দেখতে চাই উই বিকাম টয়োটা, উই বিকাম করোলা, উই বিকাম এলজি।
প্রশ্ন: দেশের অর্থনীতি সংকটের জন্য অর্থ পাচার একটা বড় কারণ, পাচারকৃত অর্থ কোন কোন দেশে আছে এবং এ অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কী হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন আপনি?
উত্তর: পৃথিবীতে কোনো দেশেই আপনি টাকা আটকে রাখতে পারবেন না, যদি কোনো অসম আইন থাকে যদি কোন বাধা থাকে। আর পৃথিবীতে যদি টপটেন অবৈধ অর্থ পাচারকারী দেশ ধরি, অনেকে বলে আনঅফিসিয়ালী, নাম্বার ওয়ান চায়না, নাম্বার টু ইন্ডিয়া, নাম্বার থ্রি রাশিয়া, নাম্বার ফোর ব্রাজিল, নাম্বার ফাইভ এ্যানি কান্ট্রি নট ইভেন বাংলাদেশ। ফর এ্যানি ডিপার্টমেন্ট।
অতি সম্প্রতি আমরা দেখছি আটাশ লক্ষ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে, অর্থাৎ ষোল বিলিয়ন ডলার। এই ষোল বিলিয়ন ডলার চলে গিয়ে থাকে, কিন্তু গত ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে একটা টাকাও যায় নাই, বিশ বিলিয়ন ডলার তো আগে ছিল, কিন্তু এখন বাইশ বিলিয়ন বা আটাশ বিলিয়ন ডলার হয় নাই। টাকা গেছে, কি যাই নাই সে বিষয়ে যাচ্ছি না। আমার কথা হলো বাংলাদেশ থেকে টাকা যাওয়ার সিস্টেম নাই, পৃথিবীতে কোথাও বাংলাদেশি টাকার নোট চলে না। কি হইছে? বাহির থেকে যে টাকা আসার কথা ছিল সেটা আসে নাই নতুবা ওভার ইনভয়েস। আমার যেটা মনে হয় অফিসিয়ালি বলার আগে প্রমাণটা নিয়ে আসা উচিৎ।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা বলছেন ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো নয়, আপনি কী বলবেন এ বিষয়ে?
উত্তর: বাংলাদেশে এই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরি দরকার সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এতে জনগণ তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসাবে এবং যারা দায়িত্বে আসবে তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে। তাতে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরী এবং বিদেশী বিনিয়োগও সচল হবে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন প্রত্যেকেই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। ওরা যখন একটা কথা বলে সেটা গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কারণ, প্রতিটা গ্রামে এদের সমর্থক ও কর্মী আছে। দলগতভাবে সমস্যার সমাধান করে। কিন্তু এদের তো দল নেই, কেউ নেই, যে কজন উপদেষ্টা আছে তাদের কয় জনকে সাধারণ জনগণ চেনে বা জানে। কেউই চেনে না বা জানে না। এদের সাথে কারও সাথে সমন্বয়ও নাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বা উপদেষ্টা পরিষদ আমাদের ডাকে নাই, আমরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বদিচ্ছায়, উদ্যোগে সরকারের কাছে যাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা এতই ব্যস্ত যে আমাদের সাথে কথা বলতে সময় হয় না তাদের, এতই ব্যস্ততা দেখায় যে অনেক কিছুই করে ফেলেছে। কী করতে পারছে আমরা ব্যবসায়ীরা দেখছি, সাধারণ জনগণও দেখছে।
আমি দশ বছর আগে বলেছিলাম, বাংলাদেশে চল্লিশ/পাঁচচল্লিশ শতাংশ বিরোধী দল, তাকে বাদ দিয়ে কোনো দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ী সমাধান হবে না, কিন্তু গত আওয়ামী সরকার সেটা অনুধাবন করে নাই। তাই তাদের এ পরিণতি। আর এখনও সেই একই দিকে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। আমি আজকেও বলছি যে সমাজে বিভেদ আছে, কিন্তু বিভেদ কখনো সমাজের ভালো ফলাফল বয়ে আনে না।
একটা কথা না বললেই নয়, সাউথ আফ্রিকায় আন্দোলনে মেয়ে-বউদের রেফ করেছে সরকার পক্ষ থেকে, তারপরও তাদেরকে ক্ষমা করে দিছে। কারণ, সমাজের সকলকে নিয়েই বসবাস করতে হবে। বর্ণবাদী আন্দোলনের নেতা নেলসেন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘আমি সাদা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, সেটা কালো বর্ণবাদ হোক বা সাদা বর্ণবাদ হোক’। ভুলত্রুটি থাকবে, ভালো-মন্দ মিলিয়েই আমরা সবাই। যে অন্যায় বা ভুল করেছে, তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে পারেন না, একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে হাজার-হাজার পরিবার জড়িত। লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ থাকুক তো দূরের কথা, ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় দ্রুত সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের বাস্তবায়ন জরুরী।
ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করবে না, এক এগারোর কথা সকলের মনে আছে। লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে রাস্তায় নামবে, কোটি কোটি ভুক্তভোগী জনসাধারণ পাশে দাঁড়াবে। জুলাই আন্দোলন শিখিয়ে দিছে, আন্দোলন অবরোধ করে রাস্তায় নামলেই দাবি আদায় করা যায়।