Google Alert – সেনাপ্রধান
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, এ দেশ সবার, এখানে ধর্ম, জাতি, বর্ণ ও গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এ দেশের ওপর সব নাগরিকের অধিকার আছে উল্লেখ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উৎসবে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।’
শনিবার,(১৬ আগস্ট ২০২৫) বিকেলে রাজধানীর পলাশী মোড়ে জন্মাষ্টমীর উৎসব ও মিছিলে ‘সম্মানিত অতিথি’ ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তার সঙ্গে এ উৎসবে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।
জন্মাষ্টমীর উৎসব ও কেন্দ্রীয় মিছিলের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ পূজা উদ্?যাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির।
এ উৎসবে নৌবাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসির নাম উল্লেখ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে, আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।…আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন। আপনাদের যত ধর্মীয় পরব (অনুষ্ঠান), আপনারা উদ্?যাপন করবেন, আনন্দ উদ্?যাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব।’
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, শত শত বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বাঙালি, পাহাড়ি, উপজাতি- সবাই মিলে এই দেশে অত্যন্ত শান্তিতে ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে।
ঢাকা শহরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর মিছিল একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান ছিল উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, উনিশ শতকে এবং বিশ শতকে এটা সব সময় হতো। তারপর একসময় বন্ধ হয়ে যায়। আবার শুরু হয়েছে। তিনি আশা করেন, এ উৎসব সব সময় জারি থাকবে। মিছিল সব সময় জারি থাকবে।
এ প্রসঙ্গে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে যত ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা আপনারা চান, ইনশাআল্লাহ আমরা সেসব সাহায্য-সহযোগিতা আপনাদের দেব।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজকে আমাদের অঙ্গীকার হবে সেই সম্প্রীতি, সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সব সময় বজায় রাখব এবং আমরা একসঙ্গে এ দেশে, এ দেশ সবার, এ দেশে আমরা শান্তিতে, সুন্দরভাবে সবাই বসবাস করব।’
নিজের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘এটা আমার অনেক পুরনো জায়গা। এই আজিমপুর, পলাশী; এখানে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। এটা আমার অনেক স্মৃতিবিজড়িত জায়গা।’
‘স্বাধীনতাকে রক্ষা করা
পবিত্র দায়িত্ব’
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের আগে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, জন্মাষ্টমী কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; বরং শান্তি, সম্প্রীতি এবং মানবতার এক উদাত্ত আহ্বানও। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা-জীবনাদর্শ শুধু অসত্য-অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসই জোগায় না, একই সঙ্গে অসহায়-আর্তমানবতার পাশে দাঁড়াতে এবং সমাজে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে জন্মাষ্টমীসহ সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সার্বিকভাবে জনগণের নিরাপত্তা ও সেবায় নিয়োজিত থাকার কথা জানান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, জন্মাষ্টমীর এই শোভাযাত্রা আবারও বিশ্বের কাছে প্রমাণ করবে, বাংলাদেশ একটি শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ। যেখানে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে দেশ পেয়েছি, যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব। আর এই দেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সবাই বদ্ধপরিকর।’
‘ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করিনি’
শ্রীকৃষ্ণের জীবনাদর্শ সম্পর্কে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তার বক্তব্যে বলেন, সত্যের পথে অটল থাকতে হবে। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
পুরান ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন, এই কথা জানিয়ে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘এখান (পলাশীর মোড়) থেকে বেশি দূরে না, এই জয়কালী মন্দিরের পাশেই আমার বাসা ছিল এবং লক্ষ্মীবাজারে বড় হয়েছি। আমার লেখাপড়া ওখানেই। তো আমার অনেক বন্ধুবান্ধব হিন্দু সম্প্রদায়ে আছে। এখনও তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, ওঠাবসা আছে। খ্রিস্টানও আছে এবং আমরা ছোটবেলা থেকেই একটা সম্প্রীতির মাধ্যমে বড় হয়ে উঠেছি, যেখানে আমরা কখনও ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করিনি।’
জন্মাষ্টমী উৎসব ও মিছিল উপলক্ষে পলাশী মোড়ের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধানের কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একসঙ্গে উপস্থিত হওয়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সেই বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পাশাপাশি থাকবে।…ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্?যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
ধর্মীয় গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের পর আলোচনা পর্ব শুরু হয়। আলোচনা শেষে প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে জন্মাষ্টমীর কেন্দ্রীয় মিছিলের উদ্বোধন করেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীপ্রধান। তাদের সঙ্গে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং জন্মাষ্টমী উৎসবের আয়োজকরাও প্রদীপ প্রজ্বালনে অংশ নেন।
পলাশীর মোড় থেকে শুরু হওয়া জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য এই মিছিল বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়। এই মিছিলে হিন্দুধর্মাবলম্বী হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। মিছিলে মা-বাবার সঙ্গে শিশুরাও ছিল। তাদের অনেকে এসেছিল বর্ণিল সাজে। কেউ রাধা, কেউ কৃষ্ণ সেজে এসেছিল। এই মিছিলে শ্রীকৃষ্ণের রথ টেনে নিয়ে গেছে একটি হাতি।