Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
কক্সবাজারে চাহিদার তুলনায় সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে চলতি আমন মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দাম দিয়েও বাজারে মিলছে না বিভিন্ন প্রকারের সার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন শীঘ্রই সংকট কেটে যাবে। জেলায় চাহিদার মাত্র ৪৫ শতাংশ সার বরাদ্দ দেওয়া হলেও ঘাটতি রয়েছে ৫৫ শতাংশ বিভিন্ন প্রকারের সার। বিশেষ করে বিসিআইসি উৎপাদিত টিএসপি এবং এমওপি সার পর্যাপ্ত পরিমাণে না মেলায় চাষাবাদে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ডিএপি ও এমওপি সারের সরবরাহও চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে জানা গেছে। এতে আমন আবাদে বিপাকে পড়েছেন জেলার ৫ লক্ষাধিক কৃষক।
কৃষকদের দাবি, সারের বরাদ্দ কম থাকার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটি সিন্ডিকেট ও কালোবাজারি চক্র এই সংকটকে আরো ঘনীভূত করছে। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবান খাগড়াছড়ি এবং মিয়ানমারেও কয়েকটি সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে কক্সবাজার জেলার জন্য বরাদ্দকৃত সার উচ্চ দামে বিক্রি করে পাচার করছেন এমন অভিযোগ ও রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জেলায় আমান মওসুমে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৪৪ মেট্রিক টন সারের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪৬ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন সার। সংকট রয়েছে ৫৮ হাজার ২২৫ মেট্রিক টনের। যা চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি।
শুধুমাত্র চলতি মৌসুমে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় ইউরিয়া সারের চাহিদা ছিল ৫ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন, কিন্তু বরাদ্দ এসেছে ২ হাজার ১৯ মেট্রিক টন। ইউরিয়া ঘাটতি আছে ৩১০০ টন। টিএসপির চাহিদা ১ হাজার ৪২৪ টনের বিপরীতে বরাদ্দ মাত্র ৩৪৩ টন। ঘাটতি আছে ১০৮১ টন। ডিএপি সারের চাহিদা ১৩৬৩ টনের বিপরীতে বরাদ্দ আছে ৮২৮ টন ঘাটতি আছে ৫৩৮ টন। এছাড়া এমওপি সারের ক্ষেত্রেও একই চিত্র, বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক। চাহিদা ২০৪৭ টনের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৩৪১ টন। চলতি মৌসুমে জেলায় ১০ হাজার ২৮ টনের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৬০৩ টন সার। একারণে ঘাটতি রয়েছে ৬৪২৫ টনের যা চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি।
এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৮ জন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়- সারের বরাদ্দ কম থাকার কারণে ডিলাররা উচ্চ দামে বরাদ্দ হওয়া সার বিক্রি করছে বিভিন্ন ডিলারদের দোকানে। সরকার নির্ধারিত ইউরিয়া সারের বস্তা ১৩৫০ টাকা হলেও কোন ডিলার উক্ত দামে বিক্রি করছেন না। ৫০ কেজি ইউরিয়া সারের বস্তায ১৩৫০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১৫৭০ টাকা। এমওপি সারের দাম সরকার নির্ধারিত ১০০০ টাকা হলেও তা বাজারে বিক্রি করছে ১৩০০ টাকায়। টিএসপি সারের চাহিদা বেশি থাকায় সরকার নির্ধারিত ১৩৫০ টাকা মূল্যের ৫০ কেজির সার বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায়। পটাশিয়াম সার সরকার নির্ধারিত মূল্য ১০০০ টাকা হলেও উক্ত দামে কোন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলারদের কাছে ১০০০ টাকার এ সার বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়। ডিএপি সার ৫০ কেজি বস্তার দাম ১০৫০ টাকা হলেও উক্ত দামে কোন ডিলার সার বিক্রি করছেন না। তবে বিভিন্ন ডিলার ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
সদরের পিএমখালীর মাছুয়াখালী এলাকার আমন চাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘দিনের বেলা সারের দোকানে গেলে ‘মজুদ নেই’ বলা হলেও রাতে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, মাঠ পর্যায়ে একটি দুর্বৃত্ত চক্র সিন্ডিকেট করে সার মজুদ ও বিক্রির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।
অপরদিকে রোপা আমনে যথাসময়ে সার প্রয়োগ করতে না পারার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষকরা। রামু উপজেলার রাজারকুলের কৃষক ছৈয়দ নুর ও জসিম উদ্দিন জানান,এখনই উপযুক্ত সময় জমিতে সার দেওয়ার। প্রয়োজনমতো সার দিতে না পারলে এবার ফলন অনেক কম হবে। কিন্তু কাঙ্খিত সার মিলছে না ডিলারদের কাছে। এ অবস্থায় ওই এলাকার অনেক চাষি চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।
এদিকে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম জানান – “চলতি মাসে আগাম রবিশস্য এবং আমন চাষাবাদে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকদের সারের ব্যবহার অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। জেলায় চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হলেও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে সারের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তুলনামুলকভাবে বর্তমানে কম। আগামী অক্টোবর মাসের বরাদ্দও মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে ইস্যু করা হয়েছে। ফলে সারের কোন সংকট হবেনা বলে তিনি দাবি করেন।
সদরের ঝিলংজা চান্দের পাড়ার কৃষক হামিদুল্লাহ ও মোস্তাক আহমেদ জানান – সরকার নির্ধারিত দামে ইউরিয়া ও টিএসপি সার যথাক্রমে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা এবং এমওপি ২০ টাকা দরে বিক্রির কথা থাকলেও কক্সবাজারে খুচরা পর্যায়ে ইউরিয়া ২৮ টাকা, টিএসপি ৪০ টাকা, ডিএপি ২৬ টাকা এবং এমওপি ২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি। ডিলারদের সার বিক্রি তদারকির জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হলেও ডিলার এবং সেই অফিসারের যোগসাজসে উচ্চ দামে কৃষকদের সার বিক্রি করা হলেও তারা কোন প্রতিবাদ জানাতে পারছে না। যার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে ভর্তুকি দেওয়া কৃষকদের এই সার তাদের কিনতে হচ্ছে উচ্চ দামে। উচ্চ দাম কেন নেওয়া হচ্ছে তার প্রতিবাদ করতে গেলেই কৃষকদেরকে সার না দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছেন ডিলাররা। ফলে কৃষকদের সাথে ডিলারদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে প্রতিদিনই।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামানিক বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কিছুটা কম রয়েছে। তবে সারের ঘাটতি নেই। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। মিয়ানমারে কৌশলে সার পাচার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন- উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলায় সার বিক্রি বিশেষ নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ডিলারগণ বিক্রি শেষে রেজিস্টার এর মাধ্যমে অনলাইনের সার বিক্রির আপডেট প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এ সার বিক্রি না করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পর উক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ও তিনি জানান। কক্সবাজারের জন্য বরাদ্দকৃত সার বান্দরবান এবং মিয়ানমারে পাচারের অভিযোগটি তিনি অস্বীকার করেন। গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সভা স্থগিত হওয়ায় বিস্তারিত তিনি জানাতে পারেননি। জেলা প্রশাসকের বদলীজনিত কারণে নির্ধারিত সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির মিটিং স্থগিত করে প্রশাসন।