আমাকে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে তুলে নেয়া হয়েছিল: উক্যনু মারমা

CHT NEWS

উক্যনু মারমা


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুর বাজার থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাত সাড়ে
৮টার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছাত্রনেতা উক্যনু মারমাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে রাত আনুমানিক
পৌনে ১০টার দিকে তাকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, উক্যনু মারমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া খবর জানাজানি হলে সিঙ্গিনালা, পানখাইয়া
পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে পড়ে। তারা খাগড়াছড়ি শহরের দিকে যেতে
থাকে। অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। 

পরে তাকে ছেড়ে দেয়ার খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা পানখাইয়া পাড়ায় ছুটে যায়।
সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে ভুক্তভোগী উক্যনু মারমা বক্তব্য প্রদান করেন।

উক্যনু মারমাকে তুলে নেয়ার খবরে সিঙ্গিনালা এলাকায় রাস্তায় নামে ছাত্র-জনতা। 


উক্যনু মারমা বলেন, “মধুপুর বাজারের পাশে একটি দোকানে মুন্ডি খাচ্ছিলাম।
সেখানে আশেপাশে যারা ছিলেন তারা দেখেছেন কিভাবে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

“আমাকে টেনেহিঁচড়ে সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে আমার শার্ট,
প্যান্ট ছিঁড়ে যায়। তারা আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে।

“আমাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে জোন কমান্ডারের সামনে বসানো হয়। তারপর উনার
(জোন কমান্ডার) সাথে আমার কিছু কথাবার্তা হয়। সেখানে জোন কমান্ডারসহ আরো দুই জন উচ্চ
পদস্থ সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা আমাকে কোন কিছু করেনি। তবে মধুপুর
বাজার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে কিছু মারধর করেছে।

“জোন কমান্ডারের সাথে প্রায় ঘন্টাখানিক কথাবার্তা হয়। আমি তাকে বলি যে,
সামনে দুর্গাপূজা রয়েছে। আপনি আমাকে যতক্ষণ এখানে রাখবেন বাইরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিত তৈরি
হতে পারে। উনিও (জোন কমান্ডার) তা স্বীকার করেছেন।

“পরে আমি জোন কমান্ডারকে বললাম, আমি আপনার ওপর ভরসা করছি। আপনাকে অনুরোধ
করছি, আপনি নিজেই আমাকে যে জায়গা থেকে আনা হয়েছে সেখানে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
এরপর জোন কমান্ডার মহাজন পাড়া পর্যন্ত তার গাড়িতে করে পৌঁছৈ দেন। সেখান থেকে ডিজিএফআইয়ের
একজন টমটমে করে আমাকে পানখাইয়া পাড়া এলাকায় পৌঁছে দিয়ে আসেন।”

উক্যনু মারমা বলেন, “আমাকে এভাবে তুলে নেয়া খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ। কোন
বাহিনীর কাছ থেকে আমরা এরকম প্রত্যাশা করি না। আমরা জানি বাংলাদেশের কোন বাহিনী কেমন।

“জোন কমান্ডার আমাকে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন
কথা বলা যায়। কিন্তু কোন কথাটি বলতে হবে, কোনটি বলতে হবে না…।

আমি আমার যুক্তি দেখিয়েছি। আমি নির্ভয়ে তার সাথে কথা বলেছি।”

তিনি জানান যে, “তারা আমার হাতে আঘাত পাওয়া স্থানে ট্রিটমেন্ট দেয়। আমার
সেন্ডেল হয়তো মধুপুরে পড়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে সেন্ডেল দেয়। টেনেহিঁচড়ে নেয়ার সময় আমার
শার্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে ঐ শার্টটির বদলে আরেকটি শার্ট পরিয়ে দেয়।”

এসময় তিনি উপস্থিত জনতাকে তাঁর ছেঁড়া শার্টটি দেখান। এতে জনতা শ্লোগান দিয়ে
এই হেনস্তার প্রতিবাদ জানান।

তিনি উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুক্রবার নিপীড়ন
বিরোধী মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সাথে আছি, পাহাড়ের সাথে আছি, জাতির সাথে আছি।”

উক্যনু মারমা বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের (বিএমএসসি) খাগড়াছড়ি
জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।

তিনি মারমা কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলায় জুম্ম
ছাত্র জনতার ডাকা আধাবেলা সড়ক অবরোধে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতাদের মধ্যে একজন।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *