আমেরিকায় বিপাকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা, ছাড়ছেন পার্ট-টাইম চাকরি

jagonews24.com | rss Feed

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি ও বহিষ্কারের হুমকির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পার্ট-টাইম চাকরি ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির ফলে অনেকে তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভিসা জটিলতা ও চাকরির সংকট

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য এফ-১ ভিসা ইস্যুর হার ৩৮ শতাংশ কমেছে। গত বছর একই সময়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৪৯৫ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার অনুমতি পেলেও চলতি বছর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৪ হাজার ৮ জন।

আরও পড়ুন>> 

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘স্থানীয়করণ’ নীতির কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে বসবাসরত সাই অপর্ণা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে বলেন, আমি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছি। কিন্তু এক বছর ধরে চাকরি খুঁজেও পাইনি। চাকরি যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে।

কর্মস্থলে নজরদারি

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (ওপিটি) কর্মসূচির আওতায় থাকা শিক্ষার্থীদের কড়া পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয়েছে। অফ-ক্যাম্পাস পার্ট-টাইম চাকরির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় অনেক শিক্ষার্থী চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

আটলান্টায় সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে মাস্টার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, কর্মকর্তারা আমার কর্মস্থলে এসে আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছিলেন। আমি তখন বাথরুমে ছিলাম। তাই নিজেকে বাঁচাতে বললাম, আমি শুধু ওয়াশরুম ব্যবহার করতে এসেছি। সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পরদিনই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।

নিউ জার্সিতে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করা এক ভারতীয় শিক্ষার্থী জানান, স্থানীয় একটি গ্যাস স্টেশনে কাজ করার সময় কর্মকর্তারা তার ভিসা ও পরিচয়পত্র পরীক্ষা করেন। সেসময় তার মালিক তাকে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে রক্ষা করেন।

বহিষ্কারের আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইনামপুরী প্রশান্ত বলেন, আইসিই কর্মকর্তারা সবসময় নজর রাখছেন। আমরা কোনোভাবেই ঝুঁকি নিতে পারি না। ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করলে বহিষ্কারের ঝুঁকি রয়েছে।

বিশেষ করে, নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা এই সংকটে বেশি বিপাকে পড়েছেন। কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী মঞ্জুষা নুথি বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। আমি আর বাড়ি থেকে টাকা চাইতে পারি না। এত কষ্ট করে এখানে পড়তে এসেছি, কিন্তু এখন জীবনযাত্রার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

নুথি জানান, তিনি আগে গ্যাস স্টেশনে পার্ট-টাইম চাকরি করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কড়াকড়ির কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ওপর ৩০ লাখ রুপি শিক্ষাঋণের বোঝা আছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে তা শোধ করবো, বুঝতে পারছি না।

ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি ও কর্মস্থলে বাড়তি নজরদারির ফলে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা চরম সংকটে পড়েছেন। ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করার সুযোগ কমে যাওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক চাপ আরও বেড়েছে, যা তাদের স্বপ্নপূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *