Google Alert – BD Army
এস এম মিন্টু কক্সবাজার থেকে
মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নানা জটিলতায় দলের অনেক সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় রয়েছে। একাধিক সূত্র গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্তবর্তী নাফ নদীর তীরবর্তী মিয়ানমারের লালদ্বীপ এলাকায় আরাকান আর্মির অন্তত ১২ জন সশস্ত্র সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় রয়েছে।
ওই সূত্র জানায়, টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধীন দমদমিয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তাদের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। তারা যেকোনো সময় জালিয়ার দ্বীপ, দমদমিয়া, কেরনতলী বা বরইতলী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে।
সূত্র জানায়, মিয়ানমার জান্তা বাহিনী সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণ মংডু টাউনশিপে বিমান হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পর জীবন বাঁচাতে মংডু এলাকায় অবস্থানরত আরাকান আর্মির বহু সদস্য সীমান্তবর্তী লালদ্বীপ এলাকায় জড়ো হয়েছে। গত জুলাই মাস থেকেই মংডু সীমান্তে আরাকান আর্মি অভ্যন্তরীণ বিভেদ, জনবল ঘাটতি ও নিরাপত্তা সঙ্কটে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। গোপন তথ্যে জানা গেছে, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি ও মংডুর বিপরীতে অন্তত ১৩টি পয়েন্টে আরসা (অৎধশধহ জড়যরহমুধ ঝধষাধঃরড়হ অৎসু) ও আরাকান আর্মির তৎপরতা বেড়েছে। এর মধ্যে টাউংপিও লেৎ-ইয়ার, এনগারাঘ্যুং, বাউতলাসরিশিং পাড়া, বাউদুল্লামাহিতাউং, অকচিলপাড়া, রেজুপাড়া, চৌধুরীপাড়া এবং লেম্বুচড়াল্যাংমুইপাড়া বেল্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দীর্ঘ সংঘর্ষ, মাদক ও লুটপাটের ভাগ নিয়ে বিরোধ এবং যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বহু সদস্য দল ত্যাগ করেছে। ঘাটতি পূরণে আশপাশের টাউনশিপ থেকে আনা নতুন সদস্যদের বড় অংশই রাখাইন নয়; তারা অন্য ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভাষাগত বাধা, ভূগোল অজ্ঞতা ও যুদ্ধক্ষেত্রে অনীহা কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।
এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী সীমান্তে বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করেন আরাকান আর্মির সদস্য জীবন তঞ্চঙ্গ্যা (২১)। বান্দরবানের গর্জবুনিয়ার বাসিন্দা এই যুবকের কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, দু’টি ম্যাগাজিন ও ৫২ রাউন্ড গুলি জব্দ হয়। তার দাবি, মংডুর একটি ক্যাম্প থেকে অন্তত ৩০০ সদস্য পালিয়েছে, যাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
এ দিকে ১১ আগস্ট রাত ১০টার পর বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে তুমব্রু এলাকার নারিকেল বাগিচা সংলগ্ন স্থানে থেমে থেমে তীব্র গুলির শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয়দের ধারণা, সেখানে আরাকান আর্মি ও আরসা বা আরএসওর মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। ৩৪ বিজিবি কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলম জানান, সংঘর্ষস্থল সীমান্ত পিলার থেকে ৩৩০ মিটার ভেতরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে।
সূত্র মতে, জনবল সঙ্কট, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ভাষাগত অমিল ও বহুমুখী চাপে উত্তর মংডুতে দ্রুত প্রভাব হারাচ্ছে আরাকান আর্মি এবং আসন্ন দিনগুলোতে আরো সদস্যের আত্মসমর্পণের সম্ভাবনা রয়েছে।