আরাকান আর্মির দাপটে বিপর্যস্ত জীবন-জীবিকা

Google Alert – আর্মি

মিয়ানমারে আরাকান আর্মির সংঘাত সীমান্ত পেরিয়ে প্রভাব ফেলছে টেকনাফ উপকূলে। তাদের কারণে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত। উপকূলের জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ, স্থলবন্দরের বাণিজ্য স্থবির, নদীর নাব্য কমে যাতায়াত ব্যাহত-সব মিলিয়ে হাজার হাজার পরিবার অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই সংকটে জেলেরা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।

স্থানীয়রা জানান, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে মাছ শিকার ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। আরাকান রাজ্য সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সম্পূর্ণ দখলে নেওয়ার পর থেকে স্থবির হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকার পথ। জেলেদের অভিযোগ, সাগর ও নাফ নদীতে মাছ শিকার করতে গেলে তাদের অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তাদের দাবি, নাইক্যংদ্বীয়া থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গেল ২০ দিনে ৫৬ জন জেলেকে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। এ কারণে ভয়ে জেলেরা মাছ ধরতে যান না। ফলে তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আর্থিক সংকটে অনেক জেলে পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শাহপরীর দ্বীপের জেলে বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গণি মাঝি বলেন, নাফ নদীর নাব্য না থাকায় আমরা ফিশিং বোট নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। জোয়ার-ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নাইক্যংদ্বীয়া সীমানা (মিয়ানমারের জলসীমা) দিয়ে গেলে আরাকান আর্মি আমাদের ধরে নিয়ে যায়। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, হয় কোস্ট গার্ডের পাহারায় আমাদের নাইক্যংদ্বীয়া জলসীমা পার করে দিতে হবে, না হলে নদী খনন করে আমাদের জলসীমা দিয়ে মাছ ধরতে যেতে পথ তৈরি করে দিতে হবে।

বোট মালিক ও জেলে সংগঠন জানায়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে শাহপরীর দ্বীপ ঘোলারচর থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত নদী ও সাগরপথ ড্রেজিং করে দিলে নৌচলাচল সহজ হবে এবং আরাকান আর্মির কবল থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। তারা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানিয়ে এলেও সরকার এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নাব্য সংকটে জাহাজ ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে চলাচল করছে এসব নৌযান। এতে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে, তেমনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের স্থলবন্দরটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। নতুন করে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় তাদেরও খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, এখানে দুটি বিষয়-একটি হল, যেহেতু তারা (আরাকান আর্মি) এখন তাদের জলসীমায় যেতে দিচ্ছে না, সে কারণে একটু জোয়ার-ভাটার হিসাব করে আমাদের জলসীমা দিয়েই যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্থলবন্দরের বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রশাসক ও টেকনাফ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, যেহেতু আরাকান আর্মি সমস্যা করছে সেহেতু আমাদের জেলেদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। কারণ আরাকান আর্মি মিয়ানমারের কোনো নির্দিষ্ট সরকার নয়। তাই তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলাটাও কঠিন।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *