Google Alert – সশস্ত্র
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা ও শিরশ্ছেদের অভিযোগে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস।
গত ২৩ জুলাই নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাংককভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, রাখাইনের বিভিন্ন গ্রাম ও আটককেন্দ্রে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে এবং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
ফর্টিফাই রাইটস-এর মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ইজাজ মিন খান্ত বলেন, আরাকান আর্মি ব্যাপক হারে অপহরণ, নির্মম নির্যাতন এবং রোহিঙ্গা হত্যা—অনেকের শিরশ্ছেদও করেছে—যা যুদ্ধ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটি এপ্রিল থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সময়কালে ৩৯ জন বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গার ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং ছবি ও ভিডিও প্রমাণ যাচাই করেছে।
একজন রোহিঙ্গা নাগরিক ‘আহমেদ’ ছদ্মনামে জানান, রমজান মাসে আরাকান আর্মি তার ভাইকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে তার ভাইয়ের শিরশ্ছেদ করা লাশ একটি জঙ্গলে পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, চালের বস্তায় ভরে ফেলা হয়েছিল… তার মাথা শরীর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল।
এপ্রিল ২০২৪-এ মংডুর এক গ্রাম থেকে পাঁচ রোহিঙ্গাকে অপহরণ করা হয় এবং কয়েক দিন পর তাদের মৃতদেহ—যার মধ্যে চারজনের মাথা কাটা—একটি পুকুরে পাওয়া যায়। ফর্টিফাই রাইটস বলছে, ওই লাশগুলোর ওপর নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।
বুথিডং এলাকার বোরিয়ং গ্রামে একই ধরনের ঘটনা ঘটে, যেখানে খোলা মাঠে একাধিক ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আটক ও নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। ‘আব্দুল্লাহ’ নামের এক যুবক বলেন, আমাকে লাঠি ও তার দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়েছে। তারা আমার মুখে কাপড় গুঁজে দেয় যাতে চিৎকার করতে না পারি।
‘শফিক’ নামের আরেকজন জানান, জানুয়ারিতে মসজিদ থেকে তুলে নিয়ে তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। ১১ মাসের আটককালীন পাঁচজন বন্দির মৃত্যুর কথাও তিনি বলেন।
আরেক বন্দি বলেন, শুধু কেউ মারা গেলে তখন তার পায়ের শিকল খোলা হয়।
এই অভিযোগ সম্পর্কে ফর্টিফাই রাইটসের পাঠানো চিঠির জবাবে আরাকান আর্মি অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং একে ‘মিথ্যা অপপ্রচার’ বলে উল্লেখ করেছে।
তবে সংস্থাটি বলছে, আরাকান আর্মি পূর্বেও একাধিক অপরাধে জড়িত ছিল, যার মধ্যে ২০২৪ সালের আগস্টে নদীতীরে গণহত্যা ও মে মাসে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এমনকি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আরাকান আর্মি স্বীকার করেছিল যে তারা দুই যুদ্ধবন্দিকে নির্যাতন ও হত্যা করেছিল।
ফর্টিফাই রাইটস জানায়, এসব কর্মকাণ্ড জেনেভা কনভেনশন এবং আইসিসির রোম সংবিধির লঙ্ঘন। সংস্থাটি চায়, আইসিসি প্রধান প্রসিকিউটর যেন রাখাইনে আরাকান আর্মির এসব অপরাধও চলমান তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করেন।
ইজাজ মিন খান্ত বলেন, আরাকান আর্মিকে যদি বৈধ বিপ্লবী শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হয়, তবে তাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে এবং বেসামরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।