আসাদের পতনের পরও সিরিয়া লেবানন সম্পর্কে অবিশ্বাস ও ভয়

Google Alert – সশস্ত্র

সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতন হলেও প্রতিবেশী লেবাননের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক এখনো জটিল ও টানাপড়েনে পূর্ণ। দুই দেশের সীমান্তে সম্প্রতি সংঘর্ষে কয়েকজন যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে চার বছরের এক লেবানিজ শিশুও রয়েছে। দশকের পর দশক ধরে সিরিয়া তার প্রতিবেশী লেবাননকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এ অবিশ্বাস ও ভীতির জন্ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

অনেক সিরীয় হিজবুল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ। কারণ তারা আসাদ সরকারকে রক্ষার জন্য সিরিয়া গৃহযুদ্ধে জড়িয়েছিল। আসাদের পতনের পর তারা লেবাননে ফিরে গেলেও এখন অনেক লেবানিজ সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীর সীমান্ত আক্রমণের আশঙ্কা করছেন।

লেবাননে সিরীয়দের প্রবেশের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অন্যদিকে লেবানিজদের জন্য সিরিয়ায়ও নতুন কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। লেবানিজরা ভয় পাচ্ছে, দামেস্ক আবারো লেবাননকে নতুন করে নিজেদের প্রভাববলয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারে। সিরীয়রা দীর্ঘদিন ধরে লেবাননকে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি কেন্দ্র হিসেবে দেখে এসেছে, বিশেষ করে হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭০ সালের অভ্যুত্থানের আগে লেবাননে বহু বিরোধী নেতা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

১৯৭৬ সালে হাফেজ আল-আসাদ তার সৈন্য লেবাননে পাঠান, যদিও এর উদ্দেশ্য ছিল লেবাননে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করা। তবে ১৯৯০ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও সিরিয়ার বাহিনী আরো ১৫ বছর লেবাননে থেকে যায়, অনেকটা ঔপনিবেশিক শক্তির মতোই। আসাদ পরিবারের শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের গোয়েন্দা সংস্থার নির্যাতন ও দমন-পীড়ন। সিরিয়ার এ সংস্থাগুলো লেবাননেও একই ধরনের কাজ করত। লেবাননের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলী হামাদেহ বলেন, ‘সিরীয়রা মনে করে লেবাননই তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্রের প্রধান প্রবেশপথ।’

১৯৪৩ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সিরিয়া লেবাননকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ২০০৮ সালে। ২০০৫ সালে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরিকে বোমা হামলায় হত্যার পর আন্তর্জাতিক চাপে সিরিয়া লেবানন থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।

২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে লাখ লাখ সিরীয় লেবাননে আশ্রয় নেয়, যা দেশটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু শরণার্থী জনগোষ্ঠীর দেশে পরিণত করে। লেবাননে আশ্রয় নেয়ার পর শরণার্থীরা বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে।

সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পথে একটি বড় বাধা হলো লেবাননের কারাগারে থাকা প্রায় দুই হাজার সিরীয় বন্দির ভবিষ্যৎ। এর মধ্যে আট শতাধিক বন্দিকে হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগে আটক করা হয়েছে। দামেস্ক তাদের সিরিয়ায় ফেরত চায়, কিন্তু লেবাননের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা কোনো হামলাকারীকে মুক্তি দেবেন না। আরেকটি বড় বাধা হলো, আসাদ চলে যাওয়ায় লেবানন এখন সিরীয় শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছে।

এসব জটিলতার মধ্যে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা একটি চুক্তি করেছেন, যেখানে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ওয়াশিংটনের আরব সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষক রাদওয়ান জিয়াদেহ বলেন, ‘সম্পর্ক উন্নয়নের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রতিটি সমস্যা আলাদাভাবে সমাধান করা, এক প্যাকেজে নয়। ধীরে ধীরে উত্তেজনা কমানো সম্ভব।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *