ইউনূসের মন্তব্যে রাজনীতিতে উত্তাপ, বৈঠকের ডাক পেলো বিএনপি

Google Alert – ইউনূস

তারা মনে করেন নির্বাচনি রোডম্যাপ না দিলে বিএনপি অচিরেই আন্দোলনে যাবে৷ তাতে দেশে আবারও সংঘাতময় অবস্থা তৈরি হতে পারে৷ কিন্তু এরইমধ্যে আগামী ২ জুন বিএনপিকে আলোচনায় ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা৷

প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে গিয়ে এই মন্তব্যটি করেছেন৷ সফর শেষে শনিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে৷ বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, দেশের ফিরেই নিজের কথার ব্যাখ্যা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা৷ তা না হলে ওই কথা নিয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা তৈরি হবে৷ ফলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরো জটিল হতে পারে৷

প্রশ্ন উঠেছে, প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য কতটা সঠিক৷ আসলেই কি একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়? অন্য কোনো দল চায় না? শুধু দলের সংখ্যা গুণে কি বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব?

ড. ইউনূসই নির্বাচন চায় না, কড়া প্রতিক্রিয়া বিএনপির

প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি৷ দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘কোনো কথা বললে, তা দেশের মধ্যে বললে ভালো৷ দেশের বাইরে গিয়ে বেশি কথা না বলে দেশের ভেতরে বললে ভালো, এটা তো বাংলাদেশের সমস্যা৷ এই সমস্যা বাইরে গিয়ে বলে তো কোনো লাভ নেই৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাকে বাংলাদেশের মধ্যে বলে এখানে সমাধান করতে হবে, তাই না? আমরা যদি বারবার বাইরে গিয়ে এসব কথা বলতে থাকি, তাহলে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে? হবে না৷ এইখানে বলতে হবে, এইখানে সমাধান৷ বাংলাদেশের মানুষই সমাধান৷”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘‘ড. ইউনূস ছাড়া সবাই ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়৷ জনগণ ডিসেম্বরেই নির্বাচন আদায় করবে৷ যদি নির্বাচন না হয়, তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে৷”

মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘‘একজন বিদেশি লোককে সংস্কারের জন্য আমদানি করা হয়েছে৷ কিন্তু এই সংস্কার করতে করতে এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যে তারা এখন আর নির্বাচন দিতে চায় না৷ বলা হচ্ছে, একটি দল নির্বাচন চায়৷ আমরা বলছি- একটি লোকই নির্বাচন চায় না, আর তিনি হলেন ড. ইউনূস৷”

দলটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারাহানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ড. ইউনূস অসত্য কথা বলছেন৷ আসলে বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে এবং আরো যেসব গণতান্ত্রিক শক্তি আছে এ রকম ৫৫টিরও বেশি দল প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাচ্ছে৷ কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা আসলে একটি রাজনৈতিক বিভক্তি সৃষ্টি করে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছেন৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘আরো যে দল আছে যেমন জামায়াত, তারা রোজার আগে নির্বাচন চায়৷ সেটা ফেব্রুয়ারি মাসে৷ তিনি (ড. ইউনূস) আর তার দল এনসিপি শুধু ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চান না৷ আর সবাই চায়৷”

‘‘তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, আইন-শৃঙ্খলা কোনো পরিস্থিতিই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না৷ একটি নির্বাচনই পারে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে৷ কিন্তু উনি যা করছেন তাতে দেশে আরো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে৷ তার ক্ষমতা ধরে রাখার এই ইচ্ছা দেশে সংকট তৈরি করবে৷”, বলেন রুমিন ফারহানা৷

‘ড. ইউনূস ও তার দল এনসিপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় না’

To play this audio please enable JavaScript, and consider upgrading to a web browser that supports HTML5 audio

ইউনূসের সমালোচনায় রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো

প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট৷ এতে বলা হয়েছে, ‘‘একটি দল বাদে কেউ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না–এমন বক্তব্য সত্যের অপলাপমাত্র৷ এই বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, শুধু একটি দল নয়, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ দেশের নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৫০টির বেশি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়৷

তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় নির্বাচনি সংস্কার করে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে৷

বাম গণতান্ত্রিক জোট বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ‘এজেন্ডা বাস্তবায়ন’ এবং ‘সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়’ নবগঠিত দলকে রাজনৈতিক সুবিধা দেয়ার জন্য নির্বাচন পেছানোর অপকৌশল নিয়েছে৷”

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘একই উদ্দেশে ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়’ নবগঠিত একটি রাজনৈতিক দল এবং ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক দল ও গোষ্ঠী নির্বাচন বানচাল করতে দেশে অস্থিতিশীল-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির নানা রকম অপতৎপরতা চালাচ্ছে৷ যা দেশকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত করবে৷”

ওই জোটের শরিক সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে ওই কথা বলছেন৷ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও তিনি তা মানছেন না৷ তিনি একটা বিভাজন তৈরি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘এর আগে তারা যতগুলো দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবার পদত্যাগ নিয়ে কথা ওঠার পর কম সংখ্যক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ বাম গণতান্ত্রিক জোটকেও ডাকেনি৷ উদ্দেশ্য হলো, যারা তাদের মতের সঙ্গে একমত হবে তাদের সংখ্যা বৈঠকে বেশি দেখানো৷ আসলে প্রফেসর ইউনূস এখন একটা ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাচ্ছেন নির্বাচন না দেয়ার৷ যেটা তার পক্ষে যায়৷ আর এজন্য হয়তো আরো দল গজাবে, তৈরি করা হবে তার পক্ষে বলার জন্য৷”

এই বামপন্থি নেতা বলেন, ‘‘আমাদের বিবেচনায় ৫৫টির মতো দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়৷ আর অন্য কিছু দল আছে তারা  জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির কথা বলছে৷ সেটাও তো কাছাকাছি সময়৷ মূল বিষয় হলো, বাংলাদেশে নির্বাচন করার ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি৷ বর্ষাকালে বাংলাদেশে নির্বাচন হয় না৷”

এই ইস্যুতে ১২ দলীয় জোটও এক বিবৃতি দিয়েছে৷ তারা বলেছে, ‘‘কেবল একটি দল নয়, দেশের সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়৷”

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘কেবল একটি দলই নয়, দেশের সব গণতন্ত্রপন্থি দল স্পষ্টভাবে নয় মাস ধরে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে এসেছে৷ বরং তিনি (ড. ইউনূস)

নিজে কিছু মৌলবাদী, জনসমর্থনহীন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনের প্রশ্নটিকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছেন, করছেন৷”

গণফোরাম তাদের বিবৃতিতে  বলেছে, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা সঠিক বলেননি৷”

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে গণফোরাম৷”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং এর ফলে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে৷”

সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন চায় এনসিপি

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, ‘‘বড় দল হিসাবে বিএনপি বার বার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের চাপ দিচ্ছে৷ তাই হয়তো প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, একটিমাত্র দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে৷”

‘সবার সঙ্গে আলোচনা করে সরকার নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে’

To play this audio please enable JavaScript, and consider upgrading to a web browser that supports HTML5 audio

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বছরের ৩০ জুনের পর তিনি একদিনও থাকবেন না৷ তিনি তো বলেছেন ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে৷ কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে৷ সেটার রোডম্যাপ না হলে সরকারকে তারা সহযোগিতা করবে না৷ বিএনপিই শুধু এভাবে বলছে৷ আর কোনো বড় দল এভাবে বলছে না৷ ফলে, প্রধান উপদেষ্টা আমরা মনে হয় এই কারণেই শুধু বিএনপির কথা বলেছেন৷ তবে কেন বলেছেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন৷”

মনিরা শারমিন বলেন, ‘‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন-এই তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে সরকার৷ ফলে আমরা মনে করি ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব৷ দেশের মানুষতো সংস্কার চায়, বিচার চায়৷”

কোনো দল একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের দাবি করতে পারে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘কিন্তু তাদের কথা মতো তো নির্বাচন হবে না৷ সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবেন৷ বিএনপি যেভাবে চাপ দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, তাদের কথা মতোই নির্বাচন হতে হবে৷”

‘লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকতে চান ইউনূস’

শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য তিনটি শক্তি মূখ্য৷ সরকার, সেনাবাহিনী ও বিএনপি৷ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার পর বাংলাদেশে বিএনপিকে একটি দল হিসাব করে প্রধান উপদেষ্টা যে কথা বলছেন তা তো হাস্যকর৷ মানুষের সমর্থন, ভোটার এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে৷ বিএনপির পরে আছে জামায়াতে ইসলামী৷ ভোটের বিবেচনায় তাদের অবস্থান অনেক নীচে৷ আর এনসিপির তো কোনো অবস্থানই তৈরি হয়নি৷ তাদের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের একটি অংশের ছাত্ররা আছে মাত্র৷”

তিনি বলেন, ‘‘আসলে প্রফেসর ইউনূস একটি মাত্র দলের কথা বলে একটি বয়ান তৈরি করতে চান৷ কোনো সংস্কার ও বিচার কাজ দৃশ্যমান না হলেও এটার কথা বলে তিনি সময় পার করতে চান৷ নানা মাধ্যমে তার সরকারের পাঁচ বছর থাকার প্রয়োজনীতা নানাভাবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ আমার মনে হয়, তিনি নানা অজুহাতে একটা লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকতে চান৷ এর সেই কারণেই একেক সময় একেক কথা বলে নতুন নতুন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন৷”

মুখোমুখি: প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস

To view this video please enable JavaScript, and consider upgrading to a web browser that supports HTML5 video

নির্বাচন ইস্যুতে সরকার ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে বলে মনে করেন এই রাজনীতি বিশ্লেষক৷ তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি ডিসেম্বরেই নির্বাচনে অনড়৷ আর সেনবাহিনীও ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়৷ ফলে সামনে কী পরিস্থিতি হয়, তা দেখার আছে৷”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমদে মনে করেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা একটা ঝামেলা পাকাতে চাইছেন৷ তিনি এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা বিভাজন তৈরি করতে চাচ্ছেন৷ তিনি যেভাবে কথা বলছেন, তা একজন রাষ্ট্রনায়কের মুখে মানায় না৷ তিনি তো দলীয় সরকারের প্রধান না৷ তিনি তো একটি নির্দলীয় সরকারের প্রধান৷”

একটি মাত্র দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়-ড. ইউনূস এমন মন্তব্য করে বিএনপিকে নিজের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করাতে চাইছেন বলেও মনে করেন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষক সাব্বির আহমেদ৷

তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষ বিপক্ষ তৈরি করতে চাইছেন৷ তার কাজ তো হলো সবার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা৷ আমরা তো কোনো কাজই হচ্ছে বলে দেখছি না৷”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার বিবেচনায় তিনি (ড. ইউনূস) দেশে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান৷ বিএনপি যদি মাঠে নামে আর এনসিপিও যদি নামে তাহলে তো সংঘাত হবে৷ তিনি তখন দেশের ওই খারাপ অবস্থার সুযোগ নিয়ে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণের চেষ্টা করবেন৷ তবে, এটা সফল তবে কী না আমি জানি না৷”

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রেফারি ভূমিকায় থাকার কথা ছিল প্রধান উপদেষ্টার৷ কিন্তু তিনি এখন একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷ তিনি এবং এনসিপি এক হয়ে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ করছেন তারা৷ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়ছে বলেও মনে করছেন তারা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের প্রধান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা প্রবণতা আছে, থামতে না জানা৷ কোথায় থামতে হবে তা তারা বুঝতে পারেন না৷ প্রধান উপদেষ্টার মধ্যেও ওই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ এখন যেটা হচ্ছে, তা হলো প্রধান উপদেষ্টা রেফারির ভূমিকার বাইরে চলে যাচ্ছেন৷ কোনো একটা পক্ষ নিচ্ছেন৷ এটা সংকট তৈরি করবে৷”

‘প্রধান উপদেষ্টা রেফারির ভূমিকার বাইরে চলে যাচ্ছেন’

To play this audio please enable JavaScript, and consider upgrading to a web browser that supports HTML5 audio

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে, তিনি কোনো একটি দলকে সময় দিতে চান৷ এই কারণেই নির্বাচন নিয়ে স্বচ্ছ কথা বলছেন না৷ তিনি আরো সময় নিতে চান৷ আর সংস্কার ও বিচারের ব্যাপারেও আমরা স্পষ্ট করে কিছু পাচ্ছি না৷ আসলে তিনি যদি দুই বছর পরও নির্বাচন করতে চান তাহলে কবে কীভাবে করতে চান, তা পরিষ্কারভাবে বলা উচিত৷ সেটা না করায় তার প্রতি অবিশ্বাস ও সন্দেহ বাড়ছে৷ আর এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে গণতন্ত্রায়নের পথে তা বড় বাধা তৈরি করবে৷”

বৈঠকের ডাক পেলো বিএনপি

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আলোচনার জন্য আগামী ২ জুন বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ শনিবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীতে কৃষক দলের এক আলোচনায় সভায় তিনি এ কথা বলেছেন৷

ফ্যাসিবাদের কূটচালে জাতির মধ্যে একটি গোষ্ঠী বিভেদ সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা৷ তিনি বলেন, ‘‘সংস্কারের নামে কলা ঝুলানো হচ্ছে৷ ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন দিতে হবে, এটা জনগণের দাবি৷ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন দেওয়ার কোনো কারণ নেই৷”

প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে ডয়চে ভেলে৷ এ প্রসঙ্গে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *