ইউরোপ-কিয়েভ হেরে যাচ্ছে, সাক্ষী হচ্ছেন ট্রাম্প

Independent Television

৩ বছরের বেশি সময়েও থামেনি ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় আক্রমণ। এরই মধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পরাজিত করে ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে মস্কো। এদিকে, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুদ্ধ বন্ধে রেফারির ভূমিকায় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করছেন দফায় দফায় বৈঠক।

আমেরিকার হোয়াইট হাউসে সোমবার অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা অংশ নিলেও কোনো বড় ঘোষণা আসেনি। তবে ভেতরে ভেতরে, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে ওয়াশিংটনের ভূমিকাকে ঘিরে এক উচ্চ ঝুঁকির কূটনৈতিক লড়াই চলছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত না আসা ইঙ্গিত করে, আসল কাজ পর্দার আড়ালেই হচ্ছে। বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেন বা বেলজিয়ামের সুরে কথা না বলা আসলে এক ধরনের সংকেত। এর মাধ্যমে তিনি দেখাচ্ছেন, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে। তিনি এখনও ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার যুক্তির সঙ্গে একমত নয়। 

এসব বৈঠক ও কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো আসলে রাশিয়া-ইউরোপ টানাপোড়েনের প্রতিফলন। মস্কোর লক্ষ্য হচ্ছে, সংঘাতে ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ততা কমানো, আর ব্রাসেলস ও কিয়েভের লক্ষ্য সেটিকে তাদের পাশে ধরে রাখা।

গত শুক্রবার আমেরিকার আলাস্কায় অনুষ্ঠিত পুতিন–ট্রাম্প বৈঠকের পর রাশিয়ার ওপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা বা চাপ না আসা প্রমাণ করছে মস্কো গতি অর্জন করছে। এমনকি ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে সরে এসে সরাসরি শান্তি আলোচনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা রাশিয়ার জন্য অনেক বেশি অনুকূল।

ইউরোপীয় নেতারা ও জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে এসেছিলেন ট্রাম্পকে প্রভাবিত করতে; যাতে তিনি নিষেধাজ্ঞা শক্ত করেন, অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখেন এবং ইউক্রেনের জন্য তাদের চাওয়া নিরাপত্তা কাঠামো নিশ্চিত করেন।

তবে এ পর্যন্ত তাদের প্রভাব সীমিত বলেই মনে হচ্ছে। শুরু থেকেই ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স পটভূমিটিও গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক দিন আগেই ট্রাম্প আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে পুতিনকে আতিথ্য দিয়েছিলেন, আর সেই বৈঠকই এমন এক কূটনৈতিক নমনীয়তার পথ খুলে দেয়, যা ইউরোপীয়দের শর্তকে পাশ কাটিয়ে যায়। ফলে ইউরোপীয় নেতারা এখন আসলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সবকিছুই নির্ভর করছে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর,যা অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। মস্কো দৃঢ়ভাবে বলছে, যে কোনো অর্থবহ নিশ্চয়তা পেতে হলে ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ হতে হবে এবং সেনাশক্তি হ্রাস করতে হবে। অন্যদিকে, কিয়েভ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাইছে আরও শক্তিশালী ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী, ইউক্রেনের মাটিতে ন্যাটো মোতায়েন, এমনকি ভবিষ্যতে ন্যাটো সদস্যপদও।

ইউরোপীয়রা মরিয়া হয়েছে এই প্রচেষ্টা করছে। তবে তারা সাদাসিধে আচরণ করছে। কারণ রাশিয়া ধীরে হলেও স্থিরভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। আর রাশিয়ার সামরিক সাফল্যের সাথে সাথে কিয়েভ ও ব্রাসেলসের আলোচনার সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে।

তবুও এসব প্রচেষ্টা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ওয়াশিংটনে প্রস্তুত হতে থাকা শান্তিচুক্তিই ইউক্রেনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আর সেই সঙ্গে ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কাঠামোকেও প্রভাবিত করবে।

অন্যদিকে, মস্কো একেবারেই নির্বিকার। জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৪০ মিনিটের ফোনালাপ করেন। প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ট্রাম্প কোনো দাবি তোলেননি এবং পুতিন কোনো ছাড় দেননি। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ সোমবারের বৈঠকের পর বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠক হতে পারে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ। ছবি: রয়টার্সএই বিষয়টি এখন স্পষ্ট, ক্রেমলিন দৃঢ় অবস্থানে আছে এবং সামরিক শক্তির কার্ড হাতে রেখেই শর্ত নির্ধারণে প্রস্তুত।

শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের এ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকতা বা চমকপ্রদ কোনো ফল না থাকলেও এর ভেতরে ছিল বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বার্তা। প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি ইউক্রেনের দৃঢ় সমর্থক হয়ে থাকবে, নাকি ধীরে ধীরে আরও বাস্তববাদী অবস্থানে ফিরে যাবে? ইউরোপীয় ইউনিয়ন বুঝতে পারছে, তাদের প্রভাব কমছে। যদিও তারা বিষয়টিকে মানতে নারাজ। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে এখন পরিস্থিতি স্পষ্টতই তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *