Google Alert – সামরিক
আলজাজিরা, বিবিসি : সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
যুদ্ধের দৈবে নয়, গতকাল রোববার একেবারে পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা চালিয়ে আলজাজিরার পাঁচ সাংবাদিকের প্রাণ নিয়েছে ইসরায়েল। এ নিয়ে রাখঢাকও নেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। শুধু ব্যাখ্যাটাই পুরনো। যাকেই হত্যা করা হচ্ছে, তাকেই হামাসের সন্ত্রাসী তকমা সেঁটে দেয়া।
নিহত পাঁচ সাংবাদিকের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত আনাস আল-শরীফ। গাজায় নৃশংস সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে বিদেশি গণমাধ্যমকে ঢুকতে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে এই সাংবাদিকেরাই বিশ্ববাসীকে দিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞের খবর।
নিহত বাকি চার সাংবাদিক হলেন- মোহাম্মাদ রেইকে, ক্যামেরাম্যান ইব্রাহীম জাহের, মোহাম্মেদ নওফাল, মোয়ামেন আলিওয়া।
তারা তাদেরও তাঁবুতে ছিলেন। তাবুটি ছিল গাজা নগরীর আলশিফা হাসপাতালের সামনে। ২৮ বছর বয়সের আনাস মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই এক্সের পোস্টে গাজায় তীব্র ইসরায়েলি হামলার কথা লিখেছিলেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আনাস আল-শরীফ হামাসের একটি জঙ্গী দলের মাথা ছিলেন তিনি। আইডিএফ দাবি করছে, তারা ২০১৯ সালের কিছু নথি পেয়েছে, যেখানে তার এই সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরেছে তারা।
শুধু তাই নয়, আনাস নাকি ইসরায়েলে রকেট হামলা এবং ইসরায়েলে সামরিক বাহিনীর সদস্যও হত্যার সঙ্গেও জড়িত।
ঘামলায় সাংবাদিক নিহতের ঘটনা ও ইসরায়েলের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। তারা বলেছে, এই পাঁচ সাংবাদিককে হত্যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আরেকটি উলঙ্গ ও পরিকল্পিত আঘাত।
সিপিজে আরও বলেছে, ইসরায়েল যা যা দাবি করছে, তার পক্ষে কোনো প্রমাণই তারা দেখাতে পারেনি।
এ বিষয়ে দেয়া বিবৃতিতে সিপিজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুধু এই যুদ্ধ নয়, তারও অনেক আগে থেকেই ইসরায়েলের পদ্ধতি একই। তারা সাংবাদিকদেও হত্যা করে, তারপর কোনো প্রমাণ ছাড়াই তারা বলবে ওই সাংবাদিক বা সাংবাদিকেরা সন্ত্রাসী ছিল।
আলজাজিরার ম্যানেজিং এডিটর মোয়াওয়াদ বলেন, ইসরায়েল চায় হামাসের কোনো খবরই বাইরে না আসুক। ইতিহাসে এমন নৃশংসতার নজির আর নেই। যে হামলায় এই পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, সে ঘটনায় মোট নিহতের সংখ্যা ৭। আল শিফা হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আরও একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নিহত হয়েছেন ওই হামলায়, মোহাম্মদ আল খালিদি তার নাম। সে হিসেবে এই এক হামলায় সাংবাদিক নিহত হয়েছেন ছয়জন।
হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত আইরিন খান। তিনি বলেন, ইসরায়েলিরা যে পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের হত্যা করছে, তার প্রমাণ বাড়ছেই। আইরিন বলেন, হত্যার কারণ যা বলছে ইসরায়েলিরা, তার কোনোটিরই ভিত্তি নেই।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ১৮৬ জন সাংবাদিক ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি স্থল অভিযান, বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলে এখন মৃত্যুর আরেক বড় নিয়ামক হয়ে উঠেছে ক্ষুধা। ক্ষুধার্ত মানুষদেরও খাবার দেয়ার লোভ দেখিয়ে হত্যা করছে ইসরায়েলিরা।
বর্তমান সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত গাজার ৬১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে হিসাব সেখানকার স্বাস্থ্য দপ্তরের।