Independent Television
বিশ্বজুড়ে খ্যাতনামা ইহুদি অনেক ব্যক্তি জাতিসংঘের পাশাপাশি বিশ্বের নেতাদের পাশাপাশি খোলা চিঠিতে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে গাজায় গণহত্যার কারণে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ইংলিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে লেখা, নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিখ্যাত ইহুদি ব্যক্তিরা চিঠিতে লিখেছেন, তাঁদের চোখে ইসরায়েলের ‘বিবেকবর্জিত’ সব কর্মকাণ্ডই গাজায় গণহত্যায় রূপ নিয়েছে।
খোলা চিঠিতে ৪৫০-এরও বেশি ব্যক্তি সই করেছেন। এঁদের মধ্যে আছেন ইসরায়েলের সাবেক কর্মকর্তা, অস্কার বিজয়ী, লেখক ও বুদ্ধিজীবী। তাঁরা চিঠিতে গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে নিধনযজ্ঞের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিটা আসছে এমন এক সময়ে যখন আগামীকাল বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে বসার কথা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, বৈঠকে নেতারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব স্থগিত করতে যাচ্ছেন।
‘(দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে) হলোকাস্টের পর মানুষের জীবন রক্ষা ও তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যে শত শত আইন, চার্টার, কনভেনশন প্রণয়ন করা হয়েছিল সেগুলো আমরা ভুলে যাইনি। ইসরায়েল একের পর এক ওই বিধিগুলো ভঙ্গ করেছে’ – খোলা চিঠিতে লিখেছেন ইহুদি নেতারা।
খোলা চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের নাম তুলে ধরেছে দ্য গার্ডিয়ান। ইসরায়েলের সংসদ নেসেটের সাবেক স্পিকার আভরাম বার্গ, ইসরায়েলের সাবেক শান্তিরক্ষা চুক্তির আলোচক ড্যানিয়েল লেভি, ব্রিটিশ লেখক মাইকেল রোসেন, কানাডার লেখক নাওমি ক্লাইন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রনির্মাতা জোনাথন গ্লেজার, মার্কিন অভিনেতা ওয়ালাস শন, অ্যামি পুরস্কারজয়ী ইলানা গ্লেজার ও হ্যানা আইনবাইন্ডার, পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী বেঞ্জামিন মোসের, সাউথ আফ্রিকার ঔপন্যাসিক ড্যামন গ্যালগাট, অস্কারজয়ী সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা ইউভাল অ্যাব্রাহাম, টনি অ্যাওয়ার্ডজয়ী টবি মারলো, ইসরায়েলি দার্শনিক ওমরি বোয়েমের মতো ইহুদি ব্যক্তিত্ব খোলা চিঠিতে সই করেছেন।
চিঠিতে ইহুদি বিখ্যাত ব্যক্তিরা বিশ্বনেতাদের তাগিদ দিয়েছেন, তাঁরা যাতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) রায় মেনেই সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি অস্ত্রের লেনদেন ও উদ্দেশ্যমূলক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে যেভাবে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করা হয়েছে সেটি থামান। গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত করা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়াও, শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে থাকা যে কারও বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের যে মিথ্যা অভিযোগ তুলে দেওয়া হয়, সেটি বাতিল করার আহ্বানও জানানো হয়েছে খোলা চিঠিতে।
চিঠিতে লেখা, ‘সব তথ্যপ্রমাণ যখন ইঙ্গিত দেয় যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আদতেই গণহত্যার আইনি সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে, প্রচণ্ড দুঃখে আমাদের মাথা নত হয়ে আসে।’
এই চিঠি ইহুদি ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইহুদি ধর্মের বাণীকেই তুলে ধরে বলে লেখা হয়েছে চিঠিতে, ‘ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের সমর্থন মানে ইহুদি ধর্মের সঙ্গে প্রতারণা নয়, বরং ইহুদি ধর্মের বাণীর যথাযথ অনুধাবন। আমাদের মহাজ্ঞানীরা যখন বলে গেছেন যে, একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা মানে পুরো বিশ্বকে হত্যা করা, তাঁরা তো ফিলিস্তিনকে ব্যতিক্রম ঘোষণা করে যাননি। এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি যতক্ষণ না অবৈধ দখলদারিত্ব ও বর্ণবাদেরও সমাপ্তি টেনে না আনছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।’
গাজায় দুই বছরের যুদ্ধের পর গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মিশরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছে। তবে এই চুক্তি সই করার পরও গত ১১ দিনে ইসরায়েল ৮০ বার চুক্তিভঙ্গ করেছে এবং অন্তত ৮০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে জানাচ্ছে প্যালেস্টাইন নিউজ এজেন্সি। উল্টোদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দাবি, হামাস চুক্তিভঙ্গ করছে, রাফায় দুজন ইসরায়েলি সেনাকে মেরে ফেলেছে এবং মৃত বন্দীদের মরদেহ হস্তান্তরে দেরি করছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইহুদি বিখ্যাত এই ব্যক্তিদের চিঠিতে বলা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির এই চুক্তিতে পশ্চিমের তীরের কোনো উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলিদের অবৈধ দখলদারিত্ব চলছেই এবং দখলদারিত্বের নেপথ্যের চিত্রটা তুলে ধরা হচ্ছে না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনকে সূত্র জানিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে লেখা, এই বছরে পশ্চিমে তীরে ইসরায়েলি দখলদারদের হামলায় ৩ হাজার ২০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। অক্টোবরে একটা সপ্তাহেই দখলদারদের হামলার ৭১টি ঘটনা ঘটেছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এই সপ্তাহেই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায়, জলপাই তুলতে যাওয়া এক ৫৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নারীর ওপর মুখে মাস্ক পরা এক ইসরায়েলি দখলদারের হামলার পর ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
