ইসরায়েলের গাজা পরিকল্পনায় বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

Google Alert – সামরিক

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা শহর পুরোপুরি দখলের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রীসভায়। এমন খবরের পরই সারা বিশ্ব থেকে আসতে শুরু করেছে প্রতিক্রিয়া।

হামলায় জর্জরিত গাজার বাসিন্দারা এখন দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। প্রতিদিনই প্রাণ হারাছে অনেক মানুষ, তার মধ্যে রয়েছে শিশুরাও। এ সময়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এমন পরিকল্পনা আরও মানবিক সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা অনেকের।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েল অধিকৃত গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ সামরিক দখল নেওয়ার যে পরিকল্পনা ইসরায়েল করেছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সেই রায়ের পরিপন্থী। যে রায়ে বলা হয়েছে ইসরায়েলকে যত দ্রুত সম্ভব তার দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে, সম্মত দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্সি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্সি।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটা পুরোপুরি অপরাধ।”

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্সি এই পদক্ষেপকে ‘গণহত্যা, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, অনাহার ও অবরোধের ধারাবাহিকতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ ‘নজীরবিহীন মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি করবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে বিবৃতিতে।

হামাস
গত দুই বছর ধরে গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। চলমান যুদ্ধে যেমন গাজার অনেক সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তেমনই হামাসের হাতে বন্দী হয়েছে অনেক ইসরায়েলি সেনা।

নেতানিয়াহুর এমন সিদ্ধান্তের পর হামাস বলছে, ইসরায়েল সরকারের যুদ্ধ আরও তীব্র করার সিদ্ধান্ত গাজায় আটক থাকা বন্দীদের ‘উৎসর্গ’ করার শামিল হবে।

বিবৃতিতে হামাস বলেছে, গাজা দখলের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে নেতানিয়াহু এবং তার নাৎসি সরকার তাদের বন্দীদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করে না। আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ার মানে যে বন্দিদের উৎসর্গ করা হবে তারা তা বোঝে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গাজায় সামরিক অভিযান বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন, সেই সঙ্গে সংযম প্রদর্শনের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

স্টারমার বলেন, গাজায় হামলা আরও জোরদার করার ইসরায়েল সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত, আমরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।

এমন পদক্ষেপ সংঘাত অবসানে সহায়তা করবে না অথবা বন্দিদের মুক্তির সহজ করবে না। বদলে শুধু আরও রক্তপাত ডেকে আনবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইসরায়েলের এমন পরিকল্পনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে চীন, সেই সঙ্গে দেশটিকে তাৎক্ষণিক তাদের বিপজ্জনক পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

এএফপিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বার্তায় বলেন, “গাজা ফিলিস্তিনি জনগণ ও ফিলিস্তিনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

তিনি আরও বলেন, “গাজায় মানবিক সংকট কমিয়ে আনা এবং বন্দিদের মুক্তির সঠিক উপায় দ্রুত যুদ্ধবিরতি।”

জার্মানির চ্যান্সেলর
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মার্জ বলেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত জার্মানি এমন কোনও সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলে রপ্তানির অনুমোদন দেবে না, যা গাজায় ব্যবহার হতে পারে।

তিনি বলেন,“ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা গাজা উপত্যকায় আরও কঠোর সামরিক অভিযানের অনুমোদন দিয়েছে। তাতে এই সংঘাতের লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জিত হবে তা জার্মান সরকারের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ছে।”

ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “এটি একটি বিপর্যয়, যা আরও অনেক বিপর্যয়ের জন্ম দেবে।”

চরম ডানপন্থী মন্ত্রীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করায় নেতানিয়াহুকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত সামরিক পরামর্শ উপেক্ষা করেছে এবং ইসরায়েলি সেনাদের ক্লান্তিকে বিবেচনায় নেয়নি।

ইউরোপীয় কমিশন
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ইসরায়েলকে তার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি একথা লিখেছেন।

ইউরোপীয় কাউন্সিল
গাজা সিটি দখলের সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।

এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ প্রতিনিধিদের ঘোষণা করা ১৯ জুলাই চুক্তির লঙ্ঘন করে না, বরং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালা এবং সার্বজনীন মূল্যবোধকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

তথ্যসূত্র : আলজাজিরা

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *