ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

Bangla Tribune

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, একসঙ্গে বিপুল মানুষের যাতায়াতে তীব্র গণপরিবহনের সংকট মোকাবিলায় এবার ঈদের লম্বা ছুটি সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে যাত্রীদের ভোগান্তিমুক্ত, স্বস্তিদ্বায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব। ঈদযাত্রায় সড়কে ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্ঘটনা ও যানজট রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ক্র্যাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির আয়োজিত ‘ঈদযাত্রায় সড়কে ডাকাতি, নগর জুড়ে ছিনতাই, সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

সড়কে বাড়তি চাপ ও ফিটনেসবিহীন সিটিবাসে পোশাক শ্রমিকদের যাত্রা বন্ধে কলকারখানা ও পোষক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ২৪ মার্চের মধ্যে পরিশোধ করে, ধাপে ধাপে বাড়ি পাঠানো নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে ঢাকা ও আশেপাশের জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা করবেন। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি মানুষের যাতায়াত হতে পারে, যার ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত হবে।

আলোচনা সভায় ৮৩ শতাংশ কোচ ও ৬০ শতাংশ লোকোমোটিভ মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত এমন পরিস্থিতিতে রেল দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতি, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করে হয়রানীমুক্ত রেলসেবা প্রদানের দাবি জানান বক্তারা। একইসঙ্গে নৌ-পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ঘাট ও নৌ-বন্দর কেন্দ্রিক যাত্রী হয়রানী, খেয়া পারাপারে বন্দরের যাত্রী পারাপারে বেসরকারি ইজারাদারদের লুটপাটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার দাবি উঠে আসে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, সরকারের পরিকল্পনার গলদে নানান অব্যবস্থাপনায় যাত্রী দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এর দায় অন্যায়ভাবে মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক সমিতি কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবদুর রহিম বক্স দুদু বলেন, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। এবারের ঈদযাত্রায় শ্রমিক ফেডারেশন যাত্রী সাধারণের পাশে থাকবে, যেকোনও অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে আমলে নেবে।

বিআরটিএ’র পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধে বিআরটিএ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ৬৪ জেলায় ভিজিলেন্স টিম তৎপরতা চালাবে। যাত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ভিজিলেন্স টিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে বিআরটিএ প্রাণপণ চেষ্টা চালাবে। যাত্রী সচেতনতা, পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশন ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব।

হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১ হাজার ৪৪৩ জন ডাকাতকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। ৩ হাজার ৯০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। ঈদে যাত্রাপথে হাইওয়ে পুলিশের হটলাইন নাম্বার সঙ্গে রাখুন। আমাদের কল করার ১৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া মিলবে। তিনি প্রবাসীদের ঈদে লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে বাড়ি যেতে হাইওয়ে পুলিশের সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান।

নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে আলোচনা সভা থেকে সাতটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো—

১। ঈদযাত্রা বহরে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

২। মোটসাইকেল যাত্রী ও আরোহীর মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রীসহ ভেস্ট পরিধান বাধ্যতামূলক করা, রুটভিত্তিক গতি নির্ধারণ, সহযাত্রীর সঙ্গে লাগেজ-ব্যগেজ নিয়ে মহাসড়কে যাতায়াত নিষিদ্ধ করা।

৩। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণের ভিজিলেন্স টিমে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৪। যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের ১০ দিন আগে উচ্ছেদ করতে হবে।

৫। কৃত্রিমভাবে যানজট সৃষ্টিকারী মহাসড়কের টোলপ্লাজা অতিরিক্ত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।

৬। সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ও মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশকে স্পটে দাড়িয়ে গাড়ির কাগজপত্র দেখার পরিবর্তে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে পেট্রোলিং ডিউটির নির্দেশনা দিতে হবে। সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সড়কে সক্রিয় রাখতে হবে। পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়কের পয়েন্টে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং পন্থায় ঈদের আগে-পরে পাহারা নিশ্চিত করতে হবে।

৭। সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রী হয়রানী, অজ্ঞানপাটি, মলমপাটি, টিকিট কালোবাজারী বন্ধে গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার দৃশ্যমান কার্যক্রম এই মুহূর্তে চালু করতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মুহাম্মদ জকরিয়া, নারীনেত্রী ও শিক্ষাবীদ ঢাকা ইস্পাহানি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, প্রচার সম্পাদক মাহামুদুল হাসান রাসেল, ছাত্র প্রতিনিধি রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *