Google Alert – সেনা
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে মানসিক সমস্যার বিষয়টি নতুন কিছু না হলেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গাজায় গণহত্যা ও ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সঙ্গে এই আত্মহত্যার বিষয়টি সম্পর্কিত। ছবি: রয়টার্স
“>
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে মানসিক সমস্যার বিষয়টি নতুন কিছু না হলেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গাজায় গণহত্যা ও ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সঙ্গে এই আত্মহত্যার বিষয়টি সম্পর্কিত। ছবি: রয়টার্স
গাজায় যুদ্ধে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি সেনাদের একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, গাজা যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ সৈনিকদের সক্ষমতার সীমানাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর ইসরায়েলি প্রচারমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, প্রায় এক লাখ রিজার্ভ সেনা ছুটির পর কাজে ফেরেনি।
সম্প্রতি তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ৫০ ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ ও ২০২১ সালে ছিল ১১ জন।
সর্বশেষ ২৭ জুলাই রিজার্ভ সেনা অ্যারিয়েল মিয়ার তামান দক্ষিণ ইসরায়েলে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন। এতে ইসরায়েলি সৈন্যদের মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে আসে।
এর আগে ৫ জুলাই গাজা ও লেবাননে দায়িত্ব পালন করা রিজার্ভ সেনা ড্যানিয়েল এদ্রি আত্মহত্যা করেন। তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত ছিলেন।
এই জুলাইয়েই আরও দুই আইডিএফ সেনার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকেও ‘সন্দেহজনক আত্মহত্যা’ বলছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ১৫ জুলাই দক্ষিণ ইসরায়েলের এক ঘাঁটিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন প্যারাট্রুপার কর্পোরাল ড্যান ফিলিপসন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ তথ্য বলছে—২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাত শুরুর পর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০২৩ সালের শুরুতে আরও ১০ সৈন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সবমিলিয়ে দুই বছরে মোট ৩৮ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেন।
এ ছাড়াও, যারা দায়িত্বের বাইরে থাকা অবস্থায় আত্মহননের পথ বেছে দিয়েছেন তাদের হিসাব এই তালিকায় নেই।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে মানসিক সমস্যার বিষয়টি নতুন কিছু না হলেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গাজায় গণহত্যা ও ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সঙ্গে এই আত্মহত্যার বিষয়টি সম্পর্কিত।
ইসরায়েলি সেনাদের হাতে দুই বছরের কম সময়ে গাজায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু। তাদের অনেককেই পুড়ে যাওয়া অথবা অঙ্গ হারানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
ইস্তানবুলের ইবনে খালদুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রমা মনোবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সাঈদা এরুয়ার বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি সেনারা যুদ্ধজনিত ট্রমার পাশাপাশি বেসামরিক জনগণের ওপর সহিংসতায় অংশ নেওয়া কিংবা তা প্রত্যক্ষ করার কারণে গভীর ও নৈতিক মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে যাচ্ছেন।’
ওই অধ্যাপক আরও বলেন, এই নৈতিক আঘাত পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের (পিটিএসডি) সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও একে ভিন্ন অবস্থা বলা যায়।
সাঈদা এরুয়ার জানান—পিটিএসডি মূলত ভয়, অতীত স্মৃতি, অতিরিক্ত সতর্কতা ও অনুভূতিহীনতার সঙ্গে জড়িত। আর নৈতিক আঘাত সৃষ্টি হয় অপরাধবোধ, লজ্জা ও নৈতিক বিভ্রান্তি থেকে।
তিনি আরও বলছেন, ইসরায়েল সাধারণত এর সেনাদের আত্মহত্যার কথা স্বীকার করতে চায় না। এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে সন্দেহজনক আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করতে চায়। তবে মানসিক অস্থিরতা থেকে আত্মহত্যার এ প্রবণতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
আত্মহত্যা করা সেনাদের বেশিরভাগই রিজার্ভ সৈন্য। তারা পিটিএসডিতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও চাকরিতে ফেরত এসে পুনরায় গাজা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএএন’র তথ্য অনুযায়ী, প্রায় তিন হাজার ৭৭০ জন সেনার পিটিএসডি ধরা পড়েছে।
গত মার্চে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বিভাগ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তারা প্রায় ১৬ হাজার সেনাকে মানসিক সেবা দিয়েছে।
সৈন্য সংখ্যাও কমছে
এদিকে নিজ বাহিনীর জনশক্তির ভারসাম্য রক্ষা ও জনগণের মধ্যে গাজায় হামলার বৈধতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ইসরায়েল।
অনেক রিজার্ভ সৈন্যরা পুনরায় দায়িত্বে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৮০ শতাংশ রিজার্ভ সৈন্য কাজে যোগ দিয়েছে। তবে দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএএন জানিয়েছে, এটি ৬০ শতাংশের মতো। সে হিসাবে প্রায় এক লাখ সেনা পুনরায় কাজে আসেননি।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইসরায়েল বিমান বাহিনীর প্রায় এক হাজার সদস্য যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও, গত মে মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শতাধিক কর্মকর্তা এক খোলা চিঠিতে এই যুদ্ধকে অনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন।
হারেৎজ পত্রিকায় প্রকাশিত ওই চিঠিতে গাজার যুদ্ধকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে এর জন্য ইসরায়েল সরকারকে দায়ী করা হয়। পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের কারণে সেনাদের মানসিক বিপর্যয়ের বিষয়েও সতর্ক করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা প্রত্যাশা করি সেনাপ্রধান সরকারের এমন এক কোনো আদেশ মানবেন না, যা সেনাদের এমন কাজ করতে বাধ্য করবে—যার পরিণতি তাদের সারা জীবনের জন্য তাড়া করে ফিরবে।’
বিশেষজ্ঞরা এই বলেও সতর্ক করেছেন যে—আগামী প্রজন্মের নবীন সৈনিকদের মধ্যে আরও বৃহত্তর পরিসরে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে।