Google Alert – সেনাবাহিনী
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
দেশে এখন নির্বাচন আয়োজন করার মতো ‘পরিস্থিতি নেই’ দাবি করে লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার বলেছেন, নির্বাচন করলে সেনাবাহিনীকে আরো ‘বিপদের’ দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি সামনে বাংলাদেশে অনেক বিপদ চিহ্ন দেখছি। সেদিক থেকে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
যদি বাংলাদেশে আমরা সবাই একমত হয়ে নির্বাচন না করি তাহলে বিপদের দিকে আমরা বাংলাদেশকে ঠেলে দেবো।
নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের বিপক্ষে মত দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা নির্বাচনবিরোধী। কারণ নির্বাচন করে লুটেরা মাফিয়া-শ্রেণিকে, যারা বিভিন্নভাবে টাকা লুট করে নিয়ে গেছে, তাদেরকে আপনারা আবার বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসাতে চান। নির্বাচন করতে হলে ১০-২০ কোটি টাকা লাগে, সাধারণ কর্মী এ নির্বাচন করতে পারবে না। আপনারা আরেক সংসদ বানাতে চান, এখানে লুটেরা মাফিয়া-শ্রেণি থাকবে। এটা আমরা প্রত্যাখ্যান করি।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, একদিকে আপনারা আমাদের সাংবিধানিক পরিবর্তন, সেটা করতে দেননি, অন্য দিকে আপনারা রাষ্ট্র গঠন করতে দেন নাই। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কায়েম রেখেছেন। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কায়েম রেখে আপনারা লুটেরা শ্রেণিকে আবার ক্ষমতায় বসাতে চান, এটা আমরা বরদাশত করব না।
ফরহাদ মজহার বলেন, বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি সেখানে নির্বাচনের কোনো পরিস্থিতি নাই। নির্বাচন করা মানে সেনাবাহিনীকে আরো বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া। তিনি বলেন, আমরা চতুর্দিকে শত্রু-পরিবেষ্টিত হয়ে আছি। মিয়ানমার আরাকান থেকে এ রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে, তারা বাংলাদেশে বসে আছে টাইম বোমার ওপরে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এ সরকার করতে পারে নাই। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে মন্তব্য করে এ কলামিস্ট বলেন, আপনি (সরকার) সেনাবাহিনীকে অতিক্রম করে করিডোরের কথা বলেন করিডোর দিতে চান কী জন্যে? সেনাপ্রধানের সাথে কথা বলেছেন কি? আপনি কথা বলেন নাই।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা আকরম খাঁ হলে ‘গণশক্তি সভা’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে বঞ্চনা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
সেখানে প্রশ্ন রেখে ফরহাদ মজহার বলেন, বিএনপি বলে অবিলম্বে নির্বাচন চাই। আপনারা ৩১ দফায় সংস্কারের কথা বলেছেন। আপনি এত বড় একটা রাজনৈতিক দল, আপনি সংস্কারের একটা প্রস্তাব দিতে পারেন না, আপনি নতুন গঠনতন্ত্রের প্রস্তাব দিতে পারেন না যে, গণ-অভ্যুত্থান থেকে আমি বুঝতে পেরেছি জনগণের এ অভিপ্রায় এটা আমি কায়েম করব আপনি একমত হচ্ছেন। তাহলে আপনার নির্বাচন দরকারটা কী? আপনাকে তো জনগণই ক্ষমতায় বসাবে।
মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে এ লেখক বলেন, তাকে আমরা শেষ যে বার্তাটা পাঠাতে চাই যে, আমরা আপনার মিত্র। আপনি ভাববেন না, আমরা এ যে কথা বলছি, তাতে আমরা আপনার শত্রুতা করছি, আমরা বিরোধিতা করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা কী চাই? আপনি পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন। কিন্তু সংবিধান বাদ দিন, নির্বাচন বাদ দিন। আসেন, আমরা নতুন গঠনতন্ত্র প্রক্রিয়ায় ঢুকি। ‘আপনি আসুন, আপনার সাথে রাজনীতি করব’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের পারিবারিকভাবে যুক্ত বলেই, তারেক আপনি নেতা হতে পারবেন না এটা ঠিক নয়। আপনি দেশে ফিরে আসুন। আমরা আপনার সাথে রাজনীতি করব, এক সাথে রাজনীতি করব। তরুণদের ‘বিভ্রান্ত’ করবেন না, তারেকের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, প্রথম দিন থেকে আমরা বলেছি যে, তরুণরা গণ-অভ্যুত্থান করেছে, তারা জিয়াউর রহমানকে পছন্দ করে। আপনি খেয়াল করেছেন যে, তারা (ছাত্ররা) গিয়ে প্রথম কাকে উদ্ধার করেছে? খালেদা জিয়াকে তাকে সম্মানের সাথে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। কারণ তিনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
ভুল রাজনীতি করলে শেখ হাসিনার মতো তারেক রহমানও দেশ থেকে পরিত্যাজ্য হবেন, এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা ৫ আগস্ট করে এসেছি ৫ আগস্টের পরে আপনি আমাদের এটা বলবেন না, যে নির্বাচন দাও, নির্বাচন দাও। কিসের নির্বাচনের চাওয়া হচ্ছে? আপনি দেশ গঠনে ভূমিকা রাখুন।
জনশক্তি সভার সভাপতি সাদেক খানের সভাপতিত্বে ও দেওয়ান সাজ্জাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম জিয়াউল হাসান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হাসিনুর রহমান, লেখক ইমরান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর রেজাউল হান্নান শাহীন।