এত সময় কখনো বন্ধ থাকেনি কুয়েট

Google Alert – সামরিক

অচলাবস্থার মধ্যে নতুন উপাচার্য পেয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার প্রত্যাশা, এবার যেন ক্লাস শুরু হয়। সেই প্রত্যাশা নিয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। দায়িত্ব নিয়েই ক্লাস শুরু করতে একের পর এক বৈঠকে বসছেন। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার থেকে চালু হতে পারে একাডেমিক কার্যক্রম।

এদিকে ক্লাস-পরীক্ষা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছেন প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী।

রোববার সন্ধ্যায় নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শৃঙ্খলা, একাডেমিক পরিবেশ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সবার মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। চলমান অচলাবস্থা নিরসনে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা চলমান রয়েছে। আশা করছি দ্রুত ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুয়েটের যাত্রা শুরু ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের অধীনে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-বিআইটি-খুলনায় রূপান্তর করা হয়।

পরবর্তী সময় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয় ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ছয় দশকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমে এত দীর্ঘ সময় অচলাবস্থা আর দেখা যায়নি।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, তার ২৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বা তার আগে কখনো কুয়েট এতদিন অচল থাকেনি। পাঁচ মাস ধরে যে অচলাবস্থা চলছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ অচলাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্লাস শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার রাত ৮টায় অধ্যাপক ফারুক বলেন, উপাচার্যের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে সেখানে আছি। আশা করছি এক-দুই দিনের মধ্যে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হবে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত পাঁচ মাসে লেখাপড়ায় দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে পড়েছে কুয়েট। গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ব্যাচের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা ছিল। তারা এখন হতাশ, অভিভাবকরা আক্ষেপে দিন কাটাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে কম-বেশি সংঘর্ষ হয়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কিছু সময় বন্ধও থাকে। তবে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের পর এ রকম কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এবার যেটি ঘটল সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ অবস্থা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

তারা বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছে। সর্বশেষ শিক্ষকরা বলেছিলেন, উপাচার্য নিয়োগ হলে তারা ক্লাসে ফিরবেন। যেহেতু উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে, ফলে তারা আশাবাদী, শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওইদিন রাতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে হামলাকারীদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা।

দাবি না মানায় ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলোয় তালা ঝুলিয়ে দেন।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা থেকে কুয়েট উপাচার্যকে মেডিকেল সেন্টারে অবরুদ্ধ করা হয়। পরদিন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে তিনি মুক্ত হন। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় তিনি ১৯ ফেব্রুয়ারির জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে উপাচার্য বাসভবনে প্রবেশ করেন।

এরপর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে বাসভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময় সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল ফিতরের ছুটির পর ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ৩৭ জনকে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভিসির পদত্যাগ দাবি করে ওইদিন থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে ২১ এপ্রিল থেকে অনশন শুরু করেন ৩২ শিক্ষার্থী।

কুয়েটের সংকট সমাধানে ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিনিধি দল এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার কুয়েটে যান।

দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। ওইদিন রাতেই কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায় সরকার।

১ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়।

৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও ক্লাসে যাননি শিক্ষকরা। ১৮ মে থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রমও বর্জন করেন তারা। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় শিক্ষকদের লাঞ্ছনায় জড়িতদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না।

২২ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হযরত আলী পদত্যাগ করেন।

২৩ এপ্রিল কুয়েটে গিয়েছিলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। তিনি বলেন, কুয়েটের সংকট আরো আগেই সমাধান হতে পারত। কুয়েটে দীর্ঘ পাঁচ মাসের অচলাবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। সংকট দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার মূল কারণ শিক্ষক সমিতির অবস্থান।

তানজীমউদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের মূল দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে পাঠদান ও তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কুয়েট শিক্ষকরা সর্বশেষ বলেছিলেন, উপাচার্য নিয়োগ হলে ক্লাসে ফিরবেন। আশা করছি এখন যেহেতু উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এটি কোনো শিক্ষকই চান না। আমরা ক্লাস শুরুর বিষয়ে সব সময়ই আন্তরিক। তবে উপাচার্য না থাকায় সংকট সমাধান সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এতদিন উপাচার্যবিহীন ছিল না।

অধ্যাপক ফারুক বলেন, আমরা আগের উপাচার্যের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। যখন দাবি জানাই, তখন দুই ব্যাচের ক্লাস চলছিল আর বাকি তিন ব্যাচের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। আমাদের দাবি জানানোর পর পরই উপাচার্য পদত্যাগ করেন। উপাচার্য চলে যাওয়ায় আমাদের দাবির বিষয়টি সমাধান সম্ভব ছিল না, আবার উপাচার্য ছাড়া কোনো ব্যাচের পরীক্ষা শুরুও সম্ভব নয়। এসব কারণেই অচলাবস্থা দীর্ঘমেয়াদি হয়।

#কুয়েট #ক্লাস #ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *