Samakal | Rss Feed
এবার জেলেনস্কি, ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের উদ্যোগ
বিশ্ব
সমকাল ডেস্ক <time class="op-modified" dateTime="2025-08-18"2025-08-18
2025-08-18
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তিনি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য শুধু অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নয় বরং একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি। তবে আলাস্কা বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিন ইউক্রেনের পুরো দনবাস অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার দাবি তোলায় বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে ট্রাম্প ও পুতিনের মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর এটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার প্রথম সাক্ষাৎ। প্রায় ৩ ঘণ্টার এই বৈঠককে ট্রাম্প ‘উষ্ণ’ আখ্যা দেন, আর পুতিন বলেন আলোচনা ছিল ‘খোলামেলা ও ফলপ্রসূ’। বৈঠকের পরপরই জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প।
মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তাদের কথোপকথন সহজ ছিল না। সেখানে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, তিনি খুব দ্রুত, সম্ভব হলে আগামী শুক্রবারই তাঁকে ও পুতিনকে নিয়ে যৌথ বৈঠক করতে চান।
এদিকে সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, আলাস্কা বৈঠকে পুতিন ফ্রন্টলাইনের বেশির ভাগ এলাকায় লড়াই থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তিনি শর্ত দিয়েছেন, ইউক্রেনকে পুরো দনবাস অঞ্চল (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) ছাড়তে হবে। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করে রেখেছে রাশিয়া। যার মধ্যে দনবাসের তিন-চতুর্থাংশের বেশি এলাকা রয়েছে। তবে জেলেনস্কি এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, দনবাসের অন্তর্গত দোনেৎস্কের কৌশলগত শহরগুলো ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য অপরিহার্য।
পরে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ লেখেন, ‘সবাই একমত হয়েছে যে যুদ্ধ শেষ করার সর্বোত্তম পথ হলো সরাসরি একটি শান্তিচুক্তি, শুধু যুদ্ধবিরতি নয়। কারণ যুদ্ধবিরতি সাধারণত টেকসই হয় না।’ ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জেলেনস্কিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তোমার একটা সমঝোতায় যেতে হবে। রাশিয়া খুব বড় শক্তি, আর তোমরা তা নও।’
অবশ্য যুদ্ধবিরতি ছাড়া আলোচনায় এগিয়ে যাওয়া কঠিন বলেছেন জেলেনস্কি। তাঁর ভাষায়, ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করাই যুদ্ধ থামানোর প্রথম শর্ত।’ আজ ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের কথা রয়েছে তাঁর। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত কয়েকজন শীর্ষ ইউরোপীয় নেতা বৈঠকে যোগ দেবেন। ইউরোপীয় দেশগুলো একদিকে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, অন্যদিকে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও চাপ আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।
আলাস্কা বৈঠকে বরাবরের মতোই তাদের শর্তগুলো পুনর্ব্যক্ত করেছেন পুতিন। শান্তিচুক্তির জন্য মস্কো চাইছে ইউক্রেন ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার আশা ত্যাগ করবে, সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করবে এবং বর্তমানে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা (ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া) অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এই অঞ্চলগুলো ২০১৪ ও ২০২২ সালের গণভোটে রাশিয়ায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে দাবি মস্কোর।
অন্যদিকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সংবিধান পরিবর্তন না করে তিনি কোনো ভূখণ্ড ছাড়বেন না। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক মস্কোর জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বে পুতিনকে একঘরে করা হয়েছিল। এবার ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সরাসরি আলোচনাকে অনেকেই মস্কোর মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। যদিও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। তারা বলছে, কোনো সমঝোতাই যেন ইউক্রেনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বা ভবিষ্যৎ ন্যাটো সদস্যপদকে সীমাবদ্ধ না করে।