Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাই। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়।
গতকাল শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শুল্ক হার প্রত্যাশিতের চেয়ে ১৭ পয়েন্ট কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনে আমাদের আলোচকরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নের প্রতি অটুট প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তারা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন এবং শুল্ক, অশুল্ক বাধা ও জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়সহ জটিল এক আলোচনার প্রক্রিয়া দক্ষতার সঙ্গে অতিক্রম করেছেন। তারা যে চুক্তিটি অর্জন করেছেন, তা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ধরে রেখেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের মৌলিক জাতীয় স্বার্থরক্ষা করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না, বরং আরও বৃহত্তর সুযোগ, দ্রুততর প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়ী সমৃদ্ধির দরজাও উন্মোচন করে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আজকের এই সাফল্য আমাদের জাতির দৃঢ়তা ও আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির এক শক্তিশালী প্রমাণ।
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্কহার ২০ শতাংশে নেমে আসায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উপদেষ্টা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতেও আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকব। ফলে মার্কিন বাজারে আমাদের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে আমরা আশা করেছিলাম এটি ২০ শতাংশের নিচে থাকবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
ওয়াশিংটনে দফায় দফায় দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতার পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে।
আজ হোয়াইট হাউস এক ঘোষণায় জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি তদারককারী প্রধান সংস্থা ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর মধ্যে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
নতুন শুল্কহারের কারণে বাজার হারাব না : বিসিআই সভাপতি
বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘আগামী এক থেকে দেড় বছর আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্ডার কিছুটা কমতে পারে, তারপর এটা ঠিক হবে। সামগ্রিকভাবে শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হওয়ায় আমরা খুশি।
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের ওপর আরোপিত শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। গতকাল শুক্রবার শুল্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় নতুন এই শুল্কহারের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন,এটা খুশির খবর যে শুল্ক কমার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে কম্পিটিটিভ (প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ) থাকবো, শুল্ক রেট (শুল্কহার) এর কারণে আমরা অন্য দেশের কাছে বাজার হারাবো না। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর শুল্ক হারও মোটামুটি একই রকম।’
তিনি বলেন, তবে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেল মার্কেটে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আমেরিকার গবেষণা তথ্য-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়লে আমেরিকান কনজিউমারদের ডিমান্ড (ভোক্তাদের চাহিদা) কমে যাবে ৩৫ শতাংশ। আর আমরা যে কম দামের পোশাক রপ্তানি করি, এখানেই ডিমান্ড (চাহিদা) কমবে বেশি।’
আনোয়ার উল আলম বলেন, ‘তাই আগামী এক থেকে দেড় বছর আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্ডার কিছুটা কমতে পারে, তারপর এটা ঠিক হবে। সামগ্রিকভাবে শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হওয়ায় আমরা খুশি।
২০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ : অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান
গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেছেন, ২০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ এসেছে। দেশটির রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ (পারস্পরিক শুল্ক) হার কমিয়ে ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দেশের রপ্তানি খাতের জন্য ‘স্বাগতযোগ্য ও সময়োপযোগী। গতকাল শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক পোস্টে এ মন্তব্য করেছেন সেলিম রায়হান।
এ অর্থনীতিবিদের মতে, নতুন এ হারের সংশোধন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কাঠামোর একটি বৃহত্তর পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এসেছে, যা দেশটির অনেক বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর প্রযোজ্য বলে মনে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কার জন্য হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে (আগে ছিল ৩০ শতাংশ), পাকিস্তানের হার কমে হয়েছে ১৯ শতাংশ (আগে ছিল ২৯ শতাংশ)। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিযোগী, যেমন ভিয়েতনাম ও ভারতের ক্ষেত্রে ট্যারিফ হার বর্তমানে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ। ফলে, বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রধান প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে সমতুল্য অবস্থানে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সমন্বয়ের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর যে ঝুঁকি বা প্রতিযোগিতামূলক চাপ ছিল, তা কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে, রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের বিঘ্নের আশঙ্কাও কমে আসবে। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ হার এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সেলিম রায়হান মনে করেন, এ সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক রপ্তানি প্রবাহে বড় প্রভাব ফেলবে। চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হলে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এটি একটি সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার, চীন যদি তুলনামূলক কম হারে শুল্ক সুবিধা পায়, তাহলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে উঠবে।