কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড যুদ্ধ শুরু: কার সেনা বেশি শক্তিশালী?

Google Alert – সেনা

 

কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনা অবশেষে বৃহস্পতিবার রূপ নিয়েছে সরাসরি সশস্ত্র সংঘর্ষে। এই সংঘর্ষে ব্যবহার হয়েছে যুদ্ধবিমান, বোমা, গোলাবারুদ ও ড্রোন। কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি থাই এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। উভয় দেশের সামরিক বাহিনী সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে, এবং গোলাগুলির খবর এসেছে অন্তত ছয়টি স্থান থেকে। সীমান্তবর্তী এলাকায় অসংখ্য বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

 

থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুদিন এক বিবৃতিতে জানান, সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক নাগরিক এবং একজন থাই সেনা। আহত হয়েছে আরও অনেকে। থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, “পরিকল্পনা অনুযায়ী” তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই যুদ্ধবিমান দুটি বোমা ফেলে একটি সড়ক ধ্বংস করে দেয়। থাই সেনারা একটি সীমান্তবর্তী মন্দিরে উঠে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া বসায় এবং এর পরপরই একটি ড্রোন উড়িয়ে দেয়। এরপরই সংঘর্ষ শুরু হয় বলে কম্বোডিয়ার অভিযোগ।

 

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এবং থাইল্যান্ডকে “সেনা আগ্রাসনে” অভিযুক্ত করেছেন। অপরদিকে, থাইল্যান্ড দাবি করেছে যে প্রথমে গুলি ছোঁড়ে কম্বোডিয়ার সেনারাই। এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও মারাত্মকভাবে অবনতির দিকে গিয়েছে। থাইল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিলে কম্বোডিয়াও একই পথে হেঁটেছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক “সর্বনিম্ন স্তরে” নামিয়ে আনে। প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বহু বছর ধরেই সীমান্ত বিরোধ চলে আসছে, বিশেষত ঐতিহাসিক মন্দির ও বনভূমি অঞ্চল নিয়ে। মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যু ও পরে থাই সেনাদের ওপর মাইন বিস্ফোরণে আঘাত লাগার পর থেকেই উত্তেজনা ফের চরমে ওঠে।

 

লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থা (IISS)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে কম্বোডিয়ার বাজেট মাত্র ১.৩ বিলিয়ন ডলার। থাইল্যান্ডের সেনা সদস্য সংখ্যা ৩,৬০,০০০, যার মধ্যে ১,১৫,০০০ জন হলেন নিয়োজিত সৈনিক। তুলনায় কম্বোডিয়ার সেনা সদস্য সংখ্যা ১,২৪,৩০০ জন। থাই সেনাবাহিনীর রয়েছে ২৮টি F-16 ও ১১টি সুইডিশ গ্রিপেন যুদ্ধবিমান, যেখানে কম্বোডিয়ার কোনও যুদ্ধবিমান নেই। নৌবাহিনীর দিক থেকেও থাইল্যান্ড অনেক এগিয়ে, তাদের একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ৭টি ফ্রিগেট ও ৬৮টি টহলজাহাজ রয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হলে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম খালি করে দেওয়া হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি সীমান্ত পারাপার পথ। সঙ্কট নিরসনে কোনও কূটনৈতিক আলোচনার ইঙ্গিত এখনো পর্যন্ত মেলেনি। সংঘর্ষ চলতে থাকলে আরও প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *