Google Alert – বাংলাদেশ
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে। কখনো উড়োজাহাজের চাকা খুলে পড়ছে, কখনো আবার ফেটে যাচ্ছে। এতে নতুন চাকা না পাওয়া পর্যন্ত উড়োজাহাজকে গ্রাউন্ডেড রাখতে হচ্ছে। এর মধ্যেই হাই সিকিউরিটি এলাকায় উড়োজাহাজের চাকা চুরির ঘটনা ঘটায় চরম তোলপাড় শুরু হয়েছে।
গত শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হাই সিকিউরিটি এলাকায় বিমানের হ্যাঙ্গারের গুদাম থেকে ১০টি চাকা চুরি হয়। প্রতিটি চাকাই বোয়িং–৭৭৭ উড়োজাহাজের। বাজারমূল্য ১৫–২৫ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২০ লাখ টাকা) করে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই কর্মীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। তবে অনেকেই এটিকে সরাসরি ‘চুরি’ নয় বরং ‘চাকা এক্সচেঞ্জ’ হিসেবে চালিয়ে দিতে চাইছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিমানের নতুন চাকাগুলোর বদলে বিদেশি একটি এয়ারলাইন্সের পুরোনো চাকা বসানো হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
বিমানবন্দরের মতো হাই সিকিউরিটি এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন—এখানে অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভেতরের একটি চক্রই এ ঘটনায় জড়িত। ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এ ঘটনায় সোমবার (১৮ আগস্ট) বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিমান কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবিএম রওশন কবীর বলেন, “চাকা চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিমানবন্দর থানার ওসি তাসলিমা আক্তার বলেন, “বিমান কর্তৃপক্ষ জিডি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তাদের চাকাগুলো অন্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।”
এদিকে একই সময়ে বিমান জানিয়েছে, কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে জেদ্দা, দুবাই, মদিনা, দাম্মাম, আবুধাবি ও শারজাহসহ বিভিন্ন আউটস্টেশনে অতিরিক্ত চাকা মজুদ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যে নতুন চাকা কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে কর্মচারীদের চাকা চুরির মতো ঘটনা, অন্যদিকে নতুন করে টেন্ডারের প্রক্রিয়া—এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বছরের পর বছর লোকসানে চলছে। অল্প কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানের সুনাম আজ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।