Google Alert – সামরিক
১৫ মাসে গাজার সামরিক তৎপরতায় ১০০ দেশের সমান নির্গমন
ছবি : সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম ১৫ মাসে সংঘটিত সামরিক তৎপরতা, ধ্বংসযজ্ঞ ও সম্ভাব্য পুনর্গঠনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের যে পরিমাণ নির্গমন ঘটেছে, তা বিশ্বের অন্তত ১০০টিরও বেশি দেশের বার্ষিক নির্গমনের চেয়ে বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের প্রধান গবেষকরা বলছেন, সামরিক কার্যক্রম থেকে সৃষ্ট কার্বন নির্গমন জলবায়ু সংকটে একটি বড় অবদান রাখছে, অথচ তা প্রায় সবসময়ই জাতিসংঘ বা রাষ্ট্র কর্তৃক উপেক্ষিত থাকে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তিগুলোতে সামরিক নির্গমন রিপোর্ট করা ঐচ্ছিক, ফলে কোনো বাধ্যতামূলক হিসাব থাকে না।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা পরিচালিত গবেষণাটি সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ধ্বংস, ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের ফলে গাজায় প্রায় ৩১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য নির্গমন ঘটবে; যা কোস্টারিকা ও এস্টোনিয়ার ২০২৩ সালের বার্ষিক নির্গমনের চেয়ে বেশি।
গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই যুদ্ধ শুধু মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে না, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করছে। কারণ যুদ্ধের সময় ব্যবহার হওয়া অস্ত্র, সামরিক যানবাহন, বিমান হামলা এবং অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ সবই ব্যাপক কার্বন নির্গমনের উৎস।
গবেষণা অনুযায়ী, হামাসের রকেট ও বাঙ্কার ফুয়েল থেকে যেখানে মাত্র ৩,০০০ টন নির্গমন ঘটেছে, যা সরাসরি যুদ্ধে মোট নির্গমনের মাত্র দশমিক ২ অংশ। সেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্রদের ব্যবহৃত অস্ত্র, ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমান থেকেই ঘটেছে যুদ্ধকালীন মোট নির্গমনের প্রায় ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ৫০,০০০ টন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম।
ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অধিকাংশ সৌর প্যানেল ধ্বংস হয়ে গেছে। একসময় গাজার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বিদ্যুৎ সৌরশক্তি থেকে আসত, যা এখন ডিজেলচালিত জেনারেটরের ওপর নির্ভর করছে। এতে করে অতিরিক্ত ১.৩ লাখ টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের অনুমোদিত ত্রাণ সরবরাহ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নির্গমন ঘটছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইসরায়েলের অনুমতি অনুসারে প্রবেশ করা প্রায় ৭০,০০০ ত্রাণবাহী ট্রাক থেকেই মোট নির্গমনের ৪০ শতাংশের বেশি নির্গত হয়েছে। তবে, সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন ঘটবে গাজা পুনর্গঠনের সময়।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, ধ্বংস হওয়া প্রায় ৪৩৬,০০০ অ্যাপার্টমেন্ট, শত শত স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো পুনর্গঠনের ফলে ২৯.৪ মিলিয়ন টন কার্বন নির্গমন ঘটবে; যা আফগানিস্তানের পুরো বছরের নির্গমনের সমতুল্য।
জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টার অ্যাস্ট্রিড পুয়েন্তেস বলেন, ‘এই গবেষণা দেখায়, গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ শুধু মানবিক নয়, পরিবেশগত দিক থেকেও বিপর্যয়কর। যুদ্ধ ও দখলদারত্বের এমন জলবায়ু ব্যয় আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য সংঘর্ষ যেমন ইয়েমেন, ইরান ও লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের সামরিক লড়াই থেকেও বিপুল পরিমাণ কার্বন নির্গমন ঘটেছে। এসব অঞ্চলে ইসরায়েলি পাল্টা হামলাগুলোর কার্বন ব্যয় হামাস, হিজবুল্লাহ কিংবা হুথিদের চেয়ে গুণগতভাবে অনেক বেশি।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সামরিক বাজেট ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের অন্যতম উচ্চতম বৃদ্ধির হারের একটি। কেবল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়মিত কার্যক্রম থেকেই বছরে ৬.৫ মিলিয়ন টন নির্গমন হয়, যা ইরিত্রিয়ার পুরো দেশের নির্গমনের চেয়েও বেশি।
ফিলিস্তিনের পরিবেশ বিষয়ক কর্মকর্তা হাদিল ইখমাইস বলেন, ‘যুদ্ধ শুধু মানুষ হত্যা করে না। এটি মাটি, পানি ও বাতাসকে বিষাক্ত করে তোলে এবং জলবায়ু সংকট আরও গভীর করে। অথচ এই বিশাল পরিবেশগত ক্ষতির কোনো আন্তর্জাতিক জবাবদিহি নেই।’
বিশ্লেষকদের মতে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এ ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত না করা হলে বৈশ্বিক কার্বন নিয়ন্ত্রণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
সময়ের আলো/এমএইচ