কুমিল্লায় বেড়েছে ঠোঙার চাহিদা

jagonews24.com | rss Feed

দেশের বাজারে পলিথিন এবং পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই কুমিল্লার বাজারে বেড়েছে প্রশাসনের নজরদারি। এতে সংকুচিত হতে শুরু করেছে পলিথিনের বাজার। তবে ভাগ্য খুলেছে কাগজের ঠোঙার। বাজার ধরতে ব্যস্ততা বেড়েছে ঠোঙা তৈরির উদ্যোক্তা ও কারিগরদের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ক্ষুদ্রঋণ পেলে পরিবেশবান্ধব এই হস্তশিল্পটি এগিয়ে যাবে আরও বহুদূর। এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

সরেজমিন কুমিল্লা নগরীর মফিজাবাদ কলোনিতে দেখা যায়, প্রতিটি ঘরে ঘরেই চলছে ঠোঙা তৈরির আয়োজন। কেউ পুরোনো কাগজের জটলা খুলছেন, কেউ তৈরি করছেন ময়দা আর তুত্তা দিয়ে ঠোঙা মোড়ানোর গাম। কেউ ঠোঙা বানাচ্ছেন আবার কেউ সূর্যের তাপে শুকাচ্ছেন তৈরি হয়ে যাওয়া ঠোঙা। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে এই কলোনির শতাধিক পরিবার কাগজের ঠোঙা তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে এই শিল্পের সঙ্গে সড়িত থাকলেও কারিগরদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কোনোমতে জীবন পার করছেন তারা। তবে গত ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই তাদের উদ্দীপনা বেড়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে ঠোঙা তৈরির কাজ। বেড়েছে চাহিদা ও আয়।

কথা হয় ঠোঙা তৈরির উদ্যোক্তা ও কারিগর আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে ঠোঙা তৈরির কাজ করছি। বর্তমানে দুই ছেলের বউ, আমি ও আমার স্ত্রীসহ মোট চারজন এই কাজের সঙ্গে জড়িত। আগে মাসে মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা আয় হতো। তবে পলিথিন বন্ধ ঘোষণা পর থেকে ঠোঙার চাহিদা বেড়েছে। এতে আয়ও বেড়েছে। গতমাসে ২৫-২৬ হাজার টাকা আয় হয়েছে।’

আনোয়ার হোসেন চান পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই ব্যাগ পুরোপুরি বন্ধ করা হোক।

পলিথিনের বাজার সংকুচিত হওয়ায় কুমিল্লায় বেড়েছে ঠোঙার চাহিদা/ছবি-জাগো নিউজ

মানসুরা বেগম নামের এক নারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘পলিথিন উঠে গেলে আমাদের জন্য ভালো। যে জায়গায় ১০ কেজি বানাচ্ছি, সে জায়গায় ২০ কেজি বানাবো। তবে ব্যবসা করতে পারছি না টাকার জন্য। পুঁজি বেশি থাকলে কাগজ বেশি কিনোন যায়। পুঁজি নাই, কাগজও কিনি কম। সরকার যদি আমাদের ট্রেনিং দেয় এবং ঋণ দেয়, তাহলে উন্নতি করতে পারবো আরও বেশি।’

৩৫ বছর ধরে ঠোঙা বানান দুলালী। প্রতিদিন ১০ কেজি বানাতে পারেন। তিনি বলেন, ‘কাগজ, ময়দা, তুত্তার ও সুতলির খরচ বাদ দিয়ে হাতে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকার মতো থাকে। এই আয় দিয়ে পরিবার চালানো কষ্ট।’

রেখা আক্তার বিজলী একজন উদ্যোক্তা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রায় সবাই ঠোঙা বানানোর কাজ করে। গত সাত বছর ধরে মা আর আমি এ ব্যবসা করি। আমরা দুই দিনে ২০ কেজি কাগজ কমপ্লিট করতে পারি। তবে পলিথিনের কারণে ঠোঙার চাহিদা একটু কম। পলিথিন যদি না থাকে তাহলে চাহিদা বেড়ে যায়। তখন আমরা একটু ভালো বিক্রি করতে পারবো।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রেখা আক্তার বলেন, ‘আমাদের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় নিয়ে ট্রেনিং ও ঋণের ব্যবস্থা করলে আয়টা আরও ভালো হবে। শিল্পটিও এদিয়ে যাবে বহুদূর।’

পলিথিনের বাজার সংকুচিত হওয়ায় কুমিল্লায় বেড়েছে ঠোঙার চাহিদা/ছবি-জাগো নিউজ

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব জাগো নিউজকে বলেন, কুমিল্লায় পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে পলিথিনের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির জন্য মানুষের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ঠোঙা ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিসিকের উপব্যবস্থাপক মুনতাসির মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ঠোঙা ঐতিহ্যবাহী শিল্প। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন নিষিদ্ধ করতে ঠোঙা ব্যবহার বাড়াতে হবে। ঠোঙা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের ক্ষুদ্র শিল্পের আওতায় এনে প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *