Samakal | Rss Feed
কৌশলগত প্রয়োজনে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত-চীন
বিশ্ব
অনলাইন ডেস্ক 2025-08-22
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া শুল্কনীতির কারণে সম্প্রতি টানাপোড়েনে পড়েছে দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। এমন পরিস্থিতিতে বেইজিংয়ের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাঁটছে ভারত। গত সপ্তাহেই দিল্লি সফর করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁর এই সফরে বাণিজ্য বাড়ানো, সীমান্ত বিতর্কে সংলাপ এগিয়ে নেওয়া এবং পাঁচ বছর পর সরাসরি আকাশপথ চালুর বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। একই সঙ্গে লিপুলেখ, নাথুলা ও শিপকিলার তিনটি প্রাচীন বাণিজ্যপথ পুনরায় খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
চলতি মাসের শেষে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপই দিল্লি ও বেইজিংকে একে অপরের কাছে টেনে এনেছে।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে সম্প্রতি ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে নতুন বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন আলোচনাও। ফলে কৌশলগতভাবেই দিল্লির জন্য এখন বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। চীনেরও অবস্থান আলাদা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা শুল্কযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এশিয়ার দুই পরাশক্তি কিছুটা হলেও পারস্পরিক সহযোগিতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
ওয়াং ইর সফরে উভয় দেশ সীমান্তে সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াসহ বিনিয়োগ বাড়ানো, ভ্রমণ সহজীকরণ, পর্যটক ভিসা প্রদান ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠান আয়োজনেও একমত হয়েছে। তবে এত ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও সংশয় রয়ে গেছে। ব্রিটেনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের গবেষক চিতিগ্ বাজপেয়ি মনে করেন, এটি ‘ঠান্ডা শান্তি’। তাঁর ভাষায়, বড় কোনো সংঘাত আপাতত এড়ানো গেলেও টেকসই সমাধানের পথে যাওয়া কঠিন হবে। কারণ, সীমান্তে এখনও অবকাঠামো নির্মাণে প্রতিযোগিতা করছে তারা। প্রকৃত ভূখণ্ড নিয়েও দেশ দুটির বিরোধ মীমাংসা হয়নি।
এ ছাড়া পাকিস্তান ইস্যুতে একেবারেই দুই মেরুতে অবস্থান দেশ দুটির। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘকালীন ‘চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব’ বজায় রেখে করিডোর প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে চীন। ইসলামাবাদকে উন্নত সামরিক সরঞ্জামও দিচ্ছে দেশটি। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এই অক্ষকে বড় হুমকি মনে করে দিল্লি। একইভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ভারতের।
এদিকে এমন বাস্তবতায় সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালু করার বিষয়ে একমত হয়েছে ভারত ও চীন। বন্ধ থাকা লিপুলেখ, শিপকিলা ও নাথুলা গিরিপথ দিয়ে এই বাণিজ্য চালুর সমঝোতা হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে। তবে এর মধ্যে লিপুলেখ আগে থেকেই বিরোধপূর্ণ। চীনের দখলে থাকা এই গিরিপথকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে নেপাল।
সব মিলিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি ভারত ও চীনকে কাছাকাছি আনলেও আস্থার ঘাটতি, সীমান্ত বিরোধ ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দেশ দুটির সম্পর্ক নাজুক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে তাদের সম্পর্কের উষ্ণতা কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।