Google Alert – সশস্ত্র
গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার ঘটনাকে নারকীয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। তিনি বলেন, ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পরও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র বাহিনী ও অংগসংগঠনগুলো সন্ত্রাস করছে। বৃহস্পতিবার ‘গোপালগঞ্জ কি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ?’ শিরোনামে ফেসবুক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতারা হামলার মুখে পড়ে। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চৌরঙ্গী মোড়ে এনসিপির নেতাদের গাড়িবহরে দুই পাশ থেকে হামলা চালায়, ইট-পাটকেল ছুড়ে। এরপর দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটছে। পৌরপার্ক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা যখন রওনা দিয়েছি, তখন গ্রাম থেকে যত আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, সারা বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করেছে। ’
এ হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে মারুফ কামাল খান এ পোস্ট দেন। তার পোস্টটি যুগান্তরের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গোপালগঞ্জ কি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ?
গোপালগঞ্জে এনসিপির লংমার্চে যে নারকীয় হামলা হয়েছে, তা শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার ঘটনা নয়—এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার এবং আইনের শাসনের ওপর প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পরও যে তাদের সশস্ত্র বাহিনী ও অংগসংগঠনগুলো এখনো সহিংসতা ও সন্ত্রাসের পথে রয়েছে, তার নির্মম প্রমাণ আমরা আবারও দেখলাম।
সন্ত্রাসী হামলা রোধে অন্তত চারজন মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অগণিত। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য বানানো মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় অবরোধ দিয়ে জনগণের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ফেরার পথে নিরস্ত্র এনসিপি নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ঢাকায় ফিরতে বাধা দেওয়া হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ লংমার্চে এ বর্বরতা চালিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সশস্ত্র অনুগামীরা—যাদের তৎপরতা সরকার ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—এ নিষেধাজ্ঞার বাস্তব প্রভাব কোথায়? প্রশাসন কী শুধু দেখেই যাবে? পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে নির্বিঘ্ন করার ব্যাপারে পুলিসের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে।
আরও গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো—এ আক্রমণের কেন্দ্রস্থল গোপালগঞ্জ। প্রশ্ন উঠছে— গোপালগঞ্জ কি বাংলাদেশের বাইরে কোনো স্বাধীন ভূখণ্ড? সেখানে কি এখন আর দেশের প্রচলিত আইন চলে না? কেউ সেখানে সভা-সমাবেশ করতে পারবে না? বাংলাদেশের অন্য যেকোনো জায়গায় সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালিত হলেও, গোপালগঞ্জে গেলেই কেন তা ‘উসকানি’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়?
আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে গোপালগঞ্জকে তাদের ব্যক্তিগত জমিদারির মতো ব্যবহার করে এসেছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের জনগণ তাদের সেই দুঃস্বপ্নের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। আজ তারা আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নেই, তবুও গোপালগঞ্জে তাদের অব্যাহত সন্ত্রাসী আধিপত্য কীসের ইঙ্গিত দেয়? এর পেছনে দিল্লিতে আশ্রিতা হাসিনার টেলি-উসকানি কাজ করেছে বলেই মনে হয়। আগামী সাধারণ নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পথে যাত্রাকে থামিয়ে দিতে এটা কোনো পরিকল্পিত চক্রান্ত কিনা তাও খতিয়ে দেখার বিষয়।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই গোপালগঞ্জ আলাদা কোনো ‘স্বায়ত্তশাসিত’ এলাকা নয়। এটি বাংলাদেশেরই একটি জেলা, যেখানে দেশের সংবিধান ও আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। যারা গোপালগঞ্জকে বিচ্ছিন্ন দুর্গ বানিয়ে রেখেছে, তাদের প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবি।
বর্তমান সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। যারা আজকের হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিতে হবে যেন গোপালগঞ্জে আর কেউ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা না দিতে পারে। অন্যথায়, এটি একটি ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে—যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
আওয়ামী লীগের আজও কোনো অনুশোচনা নেই, গ্লানিবোধ নেই। তারা এখনো আগের মতোই সন্ত্রাস আর দখলদারির মানসিকতায় গোপালগঞ্জকে বন্দি করে রেখেছে। এটা চলতে দেওয়া যায় না। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশেরই অংশ—এ কথা তারা ভুলে গেলেও, রাষ্ট্র যেন না ভোলে।
সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগ এখন আর জাতীয় রাজনৈতিক দল নয়—তারা গোপালগঞ্জের একটি আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আর কোনো দেরি করার কিংবা শৈথ্যিল্য দেখাবার সুযোগ নেই।’