Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান): “জ্ঞানবিজ্ঞানে করবো জয়, সেরা হবো বিশ্বময়” – এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ৩০ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির হলরুমে আয়োজিত এই মেলায় ৪৪টি বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্ভাবনী শক্তির স্ফূরণ। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৫টি, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৯টি, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ১০টি, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৬টি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ১০টি এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৪টি স্বতন্ত্র প্রজেক্ট প্রদর্শন করে।
ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের প্রকল্পগুলোতে উঠে আসে আধুনিক জীবনযাত্রা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের নানান ধারণা। পঞ্চম শ্রেণির শাওন ও তার সঙ্গীরা ‘স্মার্ট সিটি’ প্রজেক্টে আধুনিক হাসপাতাল (অটোমেটেড অ্যাম্বুলেন্স, ই-হেল্থ রেকর্ড ও উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম), স্মার্ট স্কুল, হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং ব্যবস্থা, এলইডি ল্যাম্প পোস্ট, গাড়ি পার্কিং সিস্টেম এবং সুপরিসর ও সুশৃঙ্খল রাস্তা উপস্থাপন করে। এই স্মার্ট সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিসহ কমিউনিটি সেন্টার, ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্সর ও সড়ক বাতির সমন্বয়ে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশের চিত্র তুলে ধরা হয়। একই শ্রেণির রাফির দল পানিচক্র, হুমাইরার দল ওয়াটার প্রজেক্ট, রাহা দল মডার্ন সিটি এবং মাইশার দল ‘স্মার্ট সিটি উইথ অটোলাইটিং সিস্টেম’ প্রজেক্ট নিয়ে তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখে।
শুধু প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাই নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও আরও বড় পরিসরের বিজ্ঞান প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হয়, যা অতিথিদের মুগ্ধ করে। একাদশ শ্রেণীর মিফতাহুল জান্নাত রাইসার দলের ‘বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন’ প্রজেক্টটি পরিবেশ সুরক্ষায় নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে। নবম শ্রেণির রোকেয়া জান্নাত রিমুর দল ‘ফিউচার সাসটেইনেবল আরবান এরিয়া’, বিশাখা বড়ুয়া’র দল ‘গ্রীণ এনার্জি সেভ প্ল্যান’, ফারিয়ার দল ‘ইলেক্ট্রিকাল ওয়াটার পাম্প’ প্রদর্শন করে। এছাড়া, সপ্তম শ্রেণির সাফা মারওয়া ইসফার দল ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির মালিহার দল ‘ইকো ফ্রেন্ডলি স্মার্ট সিটি’, শ্রেয়ার দল ‘এ স্মার্ট ভিলেজ’ ও মিম আক্তার প্রমির দল ‘স্মার্ট ভিলেজ’ প্রজেক্টগুলো নিয়ে আসে।
মেলায় অংশগ্রহণকারী এক ক্ষুদে বিজ্ঞানী জানায়, সূর্যের আলো ব্যবহার করে সহজে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, যা জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের ঝুঁকি না থাকায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
এই অভূতপূর্ব আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলীকদম সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শওকাতুল মোনায়েম, পিএসসি। এছাড়াও ১৭ ইসিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুর মোঃ সিদ্দিক সেলিম, পিএসসি, আলীকদম সেনানিবাসের ১৬ ই বেঙ্গলের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সৈয়দ আতিকুল করিম, পিএসসি, আলীকদম সিএমএইচের অধিনায়ক মেজর হোসাইন মোঃ সাঈদ, ১৫৩ ফিল্ড ওয়ার্কশপ কোম্পানির অধিনায়ক মেজর কে এম ফাত্তাহুল ইসলাম, ১৭ ইসিবির উপ-অধিনায়ক মেজর জুবায়ের আল হাসান, আলীকদম সেনানিবাসের এসএসডির অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মোঃ শাহরিয়ার ইসলাম তন্ময়, উপজেলা কৃষি অফিসার সোহেল রানা, মৎস্য অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান ও প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মেজর খন্দকার মোশতাক আহমদ, এইসি অতিথিদের স্বাগত জানান।
ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা তাদের প্রজেক্টগুলো অতিথিদের এবং দর্শনার্থীদের কাছে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস ও বৈজ্ঞানিক ধারণার স্পষ্টতা তুলে ধরে। এই বিজ্ঞান মেলা আলীকদমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান অতিথি আলীকদম সেনা জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল শওকাতুল মোনায়েম, পিএসসি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই বিজ্ঞান মেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার যে মনোমুগ্ধকর তথ্যচিত্র ও উদ্ভাবনী প্রকল্পসমূহ তুলে ধরেছে, তা সত্যিই সকল অতিথির নজর কেড়েছে এবং মুগ্ধ করেছে। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের যোগ্য ও বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের কর্মতৎপরতা নিরলসভাবে অব্যাহত রাখবে। তিনি আরও বলেন, তাঁর বিশ্বাস, অচিরেই এই প্রতিষ্ঠান জেলার গ-ি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি আদর্শ ও অনুকরণীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করবে।