খাগছড়িতে বনবিভাগের সহায়তায় গড়ে উঠেছে পাখিদের অভয়াশ্রম

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

সুসংবাদ প্রতিদিন

খাগড়াছড়ির রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে আশ্রয় গড়ে তুলেছে শত শত টিয়া। শিকারীদের উৎপাত না থাকায় ও বনবিভাগের তৎপরতায় নিরাপদ আবাসস্থল পাওয়ায় অন্তত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কার্যালয়ের একাধিক বৃক্ষে আবাস গড়ে তুলেছে এসব মদনা টিয়া। প্রকৃতি সুরক্ষায় অসামান্য অবদান রাখা এসব টিয়া সংরক্ষণে নতুন করে ফলজ চারা রোপণ করেছে বনবিভাগ।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত হাজারো টিয়ার উপস্থিতি থাকে পুরো এলাকায়। পাহাড়ে বিভিন্ন স্থানে বিচরণের পর ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া এসে আশ্রয় নেয় কার্যালয়ের উঁচুবৃক্ষে। রেঞ্জ কর্মকর্তা কার্যালয়ের আকাশমনি, বট, পাকুড়সহ বিভিন্ন বড় বৃক্ষের শাখায় শাখায় দলবদ্ধভাবে রাতে আশ্রয় নেয়। পাখির কলতানে পুরো এলাকা মুখরিত থাকে। সবুজ দেহ, বুকে লালরং এবং পালকে এক চিলতে হলুদ নিয়ে সুর্দশনলাল-বুকটিয়া। খাগড়াছড়ির রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের গাছে গাছে এক সাথে শত শত টিয়া। এমন দুর্লভ দৃশ্য এবং টিয়ার অনিন্দ্য সুরে শব্দেমুখরিত পুরো এলাকা। মূলত নিরাপদ আবাস এবং শিকারীদের উৎপাত না থাকায় বছরের পর বছর এখানে আশ্রয় নিয়েছে তারা। পাখি শিকার বন্ধে তৎপর বনবিভাগের কর্মীরা। খাগড়াছড়ি সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, প্রায় আনুমানিক ১০ বছর ধরে কয়েক হাজার টিয়া এখানে অবস্থান করছে। এরা রাতের বেলায় এখানে থাকার ভোরে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পরে। যাতে কেউ শিকার করতে না পারে, বিরক্ত করতে না পারে সর্বসময় পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই তারা এখানে নিরাপদ বোধ করে বিধায় এখানে থাকে। পাখির খাবার উপযোগী এ বছর প্রায় ২০০ ফলদ বৃক্ষ রোপণ করেছি। এর মধ্যে উদাল, গুটিজাম, বট, পাকুড়, আম, ডেউয়া গাছের চারা রোপণ করেছি। কোন শিকারি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে এটি টিয়াদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে উঠেছে। আশপাশের কেউ যদি শিকার করতে আসে আমরা তাদের প্রতিহত করি।

পাখি প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখে। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খাওয়ার পাশাপাশি এরা বনবিস্তারের সহায়তা করে। শিকার বন্ধে তৎপরতার পাশাপাশি টিয়া সুরক্ষায় পাখির খাবার উপযোগী ফলদ বৃক্ষরোপণের দাবি পরিবেশ সংগঠকদের।

বায়ো-ডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটি’র সংগঠক সবুজ চাকমা বলেন, ‘কিছু কিছুু পাখি আছে মানুষের কাছাকাছি এসে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। টিয়া এমন একটি পাখি, খাবারের খোঁজে অনেক দূরে যায়, বিকালে আবার লোকালয়ের আশপাশে চলে আসে। লোকালয়ের মধ্যে ঈগল, চিলের মতো শিকারি পাখিদের উপস্থিতি কম থাকে ফলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে। টিয়া পাখি সংরক্ষণের জন্য উদাল, বট, পাকুড়, অশ্বথসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের বীজজাতীয় গাছ রোপণ করলে টিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আশ্রয় নিবে।

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন-কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা বলেন, মদনা টিয়া মূলত পাহাড়ি অঞ্চলের পাখি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সিলেট অঞ্চলে এদের দেখা যায়। এরা আকারে ৩৮ সে.মি পর্যন্ত হয়। লালচে পেটছাড়া দেহ সবুজ, কাঁধহলদে, মাথাধূসর, চোখহলুদ। চোখ থেকে কপাল পর্যন্ত কালো ব্যান্ড। বেগুনি-নীল লেজের আগা হলদে। পুরুষ টিয়ার চঞ্চুলাল। স্ত্রীর চঞ্চুর কালচে বাদামি। লাল-বুক টিয়া বা মদন টিয়া ২০১২ সালের বন্য প্রাণী আইনে সংরক্ষিত প্রজাতি। মদনা বা লাল-বুক টিয়ার সুুরক্ষায় সার্বক্ষণিক পাহারার পাশাপাশি নতুন করে পাখির খাদ্য উপযোগী গাছলা গিয়ে বনসৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। পাখির জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলার জন্য সার্বক্ষণিক পাহারা থাকে। স্পেশাল টিম রয়েছে যাতে কেউ পাখিদের উত্যক্ত করতে না পারে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *