CHT NEWS
খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলার প্রতিবাদে এবং হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
৫ আগস্ট ২০২৫ রোজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির উদ্যান গেইট থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন ঢাকা নগরের সংগঠক নাঈম উদ্দিন। এছাড়া সমাবেশ উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার চঞ্চল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সভাপতি দীলিপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য নাহিয়ান রেহমান রাহাত।
সমাবেশে অমল ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতন দিবসে “অবিলম্বে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি মেনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে” খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ারে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। আজ সকালে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তাদের ছোড়া গুলিতে পূর্ণমুখী চাকমা (৫৩) নামে এক বৃদ্ধাসহ কয়েকজন আহত হয়। সকালের দিকে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর দুর্বৃত্তরা জিরো মাইল, দেওয়ান পাড়া, দীঘিনালা মিছিলে আসা লোকজনদের বাধা দেয়। এই বিষয়ে খাগড়াছড়ি ডিজি ও পুলিশ সুপারকে অবগত করা হলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এবং হামলার সময় পুলিশের নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
তিনি আরো বলেন, সরকার স্বাধীনতাত পর থেকে সেনাশাসন জারি রেখে পাহাড়িদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে এক বছর পরও পাহাড়ে সেনাশাসন চলছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি।
তিনি, খাগড়াছড়িতে মিছিলে ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদসহ অবিলম্বে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারও বিচারে দাবি জানান। এছাড়াও পাহাড়ের সেনাশাসন প্রত্যাহার ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়-সমতলে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানো আহ্বান জানান।
ফাহিম আহমদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালন করছে সরকার। যারা জুলাইয়ে লড়াই করেছেন, যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই সরকার গঠন হয়েছিল আবার তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আর বলেন, ইউপিডিএফ’র দাবি পাহাড়ে জনগণের মুক্তি, পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির দাবি। সে দাবি নিয়ে যখন ইউপিডিএফ সমাবেশ করছে তখন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, সেনাবাহিনীর বি-টিম ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী, মুখোশ বাহিনী কর্তৃক হামলা হয়েছে। পাহাড়ে এই দিনে হামলা করে হাসিনা সন্ত্রাসীদের বিরদ্ধে জনগণের বিজয়ের দিনকে কলঙ্ক করেছে। গত এক বছরে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত যে কলঙ্ক জন্ম নিয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি আজকে খাগড়াছড়িতে ঘটেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা স্পস্ট করে বলেছিলাম বিপুল চাকমার খুনিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে না, শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিপুল চাকমা খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে সেনাবাহিনীর জড়িত, মুখোশ বাহিনী জড়িত ছিল। তারা এখনো বাংলাদেশে আছে, সে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এখনো চলছে।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিলো মানুষের ন্যায্যতার প্রশ্নে ও বৈষম্য বিরুদ্ধে। গণমানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে। কিন্তু পাহাড়ে মানুষ সে অধিকার পায়নি, রাষ্ট্র তাদেরকে মানবিক মর্যাদা দেয়নি, নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি পাহাড়ে যে রক্ত ঝড়ছে তা আগামী দিনের ফ্যাসিস্ট শাসন, ইউনুস-সেনাশাসনের গদিতেও আগুন জ্বালাবে। জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে আগামী দিনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
নাঈম উদ্দিন বলেন, আমরা পাহাড়ে ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনে যারাবআক্রমণ করছে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। এই রাষ্ট্র সমতল থেকে ছিন্নমূল, নদী ভাঙ্গন বাঙালিদের পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের অবৈরী দ্বন্দ্ব জিয়ে রেখেছে। তাতে কিছু অংশ মানুষ লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার ‘আদিবাসীদের’ বন্ধু নয়, তারা সাম্রজ্যবাদ পরিচালিত সেনা সমর্থিত সরকার। ফলে পাহাড়ে রাস্তায় প্রতি কিলোতে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
তিনি, জনগণের সংগ্রামকে বেগবান করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।