খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে রামগড়ে বিক্ষোভ, ইউনূসের কুশপুত্তলিকা দাহ

CHT NEWS


রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫

খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কোয়ারে গত ৫ আগস্ট ইউপিডিএফের আয়োজিত সমাবেশে সরকারের
লেলিয়ে দেয়া ঠ্যাঙাড়েদের সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং
ইউনূসের কুশপত্তলিকা দাহ করেছে চার সংগঠন।

আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট ২০২৫) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ,
গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে
এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে।

ইউনূসের ফ্যাসিবাদ রুখো, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম কর’ শ্লোগানে
আজ সকাল ১১টায় রামগড় উপজেলার দাতারাম পাড়া মুখ এলাকায় খাগড়াছড়ি – ঢাকা সড়কে বিক্ষোভ
মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন শ্লোগানে সড়ক প্রদক্ষিণ করে যৌথ খামার এলাকায় গিয়ে
প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
(পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় অর্থ সংম্পাদক শান্ত চাকমা, রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি তৈমাং
ত্রিপরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি ধনু ত্রিপুরা ও পার্বত্য
চট্টগ্রাম নারী সংঘের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি গুলোমনি চাকমা।

ছাত্রনেতা শান্ত চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে ঠ্যাঙাড়েদের সশস্ত্র হামলা শাসকগোষ্ঠির পার্বত্য চট্টগ্রামে
ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। অতীতের ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো বর্তমান
ইউনুস সরকারও এসব সশস্ত্র ঠ্যাঙাড়ে গোষ্ঠিকে লেলিয়ে দিয়ে ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন
দমনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

স্বাধীনতার পর থেকে পাহাড়ি জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে
তিনি বলেন, আন্দোলন করলে কেউ ‌‌‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হয়ে হয়ে যায় না। যদি তাই হতো তাহলে
’৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকারীরাও তাই হতো। ইতিহাসের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের
পহাড়ি জনগণও তাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছে।
তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে কেন বিমাতাসূলভ আচরণ করা হচ্ছে? কেন তাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী
তকমা দেওয়া হচ্ছে?

তিনি সরকার-প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায্য আন্দোলন
দমাতে আপনারা যে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী সৃষ্টি করেছেন অবিলম তাদের যদি থামাতে না পারেন, তাদের
কার্যক্রম যদি বন্ধ না করেন তাহলে ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি হবে, নব্বই দশকের মতো জনগণ
প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

তিনি অবিলম্বে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সন্ত্রাস বন্ধ করা ও তাদরেকে আইনের আওতায়
নিয়ে আসা, খাগড়াছড়িতে সমাবেশে হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি এবং সেনাশাসন
প্রত্যাহারপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধ করার দাবি জানান।

তৈমাং এিপুরা খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের সমাবেশে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,  গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক
বছর পূর্তির দিনে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কোয়ারে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি
নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। কিন্তু মিছিল নিয়ে সমাবেশে স্থলে গেলে সরকারের
লেলিয়ে দেয়া ঠ্যাঙাড়েরা সেই সমাবেশের ওপর হামলা চালায়, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ওপর
গুলিবর্ষণ করলে এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

তিনি এ হামলাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশে উপস্থিত
থাকলেও হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এতেই প্রমাণ হয় এ
হামলার ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে। তিনি এ জন্য ড. ই্উনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের
দায়ি করেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজ সকালে সোনাই আগা পাড়া থেকে লোকজকন বিক্ষোভে আসার
সময়ে মো. ইউনূস নামে এক সেটেলার বাঙালি বিএনপি’র ক্ষমতা দেখিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করতে দু’টি জীপ গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মিছিল, মিটিং করার
সকলের অধিকার রয়েছে। দীর্ঘ পনের বছরের অধিক ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিপীড়নের পরও পাহাড়ে
বিএনপি এখন ফ্যাসিস্ট ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ের জনগণ কোন ফ্যাসিস্টকে
আর বরদাস্ত করবে না।  

অন্যান্য বক্তারা খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের সমাবেশে ঠ্যাঙাড়েদের সশস্ত্র হামলার
জন্য ইউনূস সরকার কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে বলেন, এই সরকারও আগের ফ্যাসিস্ট
সরকারের মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন দিয়ে অন্যায়-অবিচার, দমন-পীড়ন জারি রেখেছে।
আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের এই কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের
সমাবেশে হামলাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

সমাবেশ শেষে চার সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ অংশগ্রহণকারীরা ইউনূসের কুশপুত্তলিকায়
লাঠি ও জুতাপেটা করে খাগড়াছড়িতে সমাবেশে হামলার প্রতিবাদ জানান। শেষে তারা ইউনূসের
কুশপুত্তলিকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *