খাগড়াছড়িতে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৭ম বার্ষিকীতে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন

CHT NEWS


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫

খাগড়াছড়িতে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৭ম বার্ষিকীতে শহীদদের স্মরণে অস্থায়ী
স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন
করেছে তিন সংগঠন।

আজ সোমবার (১৮ আগস্ট ২০২৫) বিকাল ৫টায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া এলাকায়
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা
শাখাসমূহের পক্ষ থেকে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
জানানো হয়। এরপর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। 

এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি
মিঠুন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তৃষ্ণাঙ্কর চাকমার সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণমূলক
বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা।

ছাত্রনেতা শুভাশীষ চাকমা বলেন, ২০১৮ সালে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের সময় আমিও
প্রত্যক্ষদর্শী। সেদিন দিবালোকে পুলিশ ফাঁড়ি ও বিজিবি হেডকোয়ার্টারের সামনে সেনা মদদপুষ্ট
ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড চালয়েছিল। আজকে ৭ বছরেও সেই হত্যাকাণ্ডে
জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার এখনো হয়নি, বরং সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে,
তারা বারবার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচার না হওয়ার কারণে
২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তারা আবারো পানছড়িতে উদীয়মান চার ছাত্র-যুব নেতা বিপুল, সুনীল,
লিটন ও রহিনদের ঠান্ডা মাথায় ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করার সাহস পেয়েছে। সে ঘটনার বিচারও
সরকার করেনি।

শুভাশীষ চাকমা বলেন, চব্বিশে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের পর ড.
ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও পাহাড়ের পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি।
ড. ইউনূস সরকারের দায়িত্ব নেয়ার ১ মাস পর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের
ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এতে ধন রঞ্জন চাকমা, জুনান চাকমা, রুবেল ত্রিপুরা ও
অনিক চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ
তিন জন উপদেষ্টা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিচারের আশ্বাস দিলেও এক বছরেও বিচারের কোন
পদক্ষেপ সরকার নেয়নি।

মিঠুন চাকমা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের পর সমতলে  গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলেও পাহাড়ে আগের মতেই
রয়েছে। তার দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হলো, গত ৫ আগস্ট হাসিনা পতনের ১ বছর পূর্তির দিনে
খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কোয়ারে ইউপিডিএফের সমাবেশে পুলিশের সামনে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের
হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। এ হামলায় ৫৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। কিন্তু
পুলিশ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, পাহাড়ে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ মদদ দেয়ার কারণে খুন, গুম, অপহরণ, হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। ফলে তারা আরো উৎসাহিত হয়ে বারবার হত্যাকাণ্ডসহ
নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডসহ ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের দ্বারা এ যাবত সংঘটিত
সকল হত্যার বিচার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার
 দাবি জানান।

আলোচনা সভা শেষে শহীদদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।


এদিকে, খাগড়াছড়ি সদরে সকাল থেকে সেনাবাহিনীর তৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়। এছাড়া
সন্ধ্যা ৭টার সময় পুলিশ স্বনির্ভর বাজার হতে স্টেডিয়াম পর্যন্ত গাড়ি তল্লাশি চালায়
বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে সেনা মদদপুষ্ট
ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশের সামনে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে
সশস্ত্র হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা নির্বিচার ব্রাশফায়ার করে পিসিপি নেতা তপন চাকমা
ও এল্টন চাকমা, যুব নেতা পলাশ চাকমা, উত্তর খবংপুজ্জে গ্রামের বাসিন্দা জিতায়ন চাকমা
ও রূপম চাকমা ও পানছড়ি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী ধীরজা চাকমাকে হত্যা করে। এছাড়া সেদিন
সন্ত্রাসীরা পেরাছড়ায় বিক্ষোভরত জনতার ওপরও হামলা চালায়। এতে শান কুমার চাকমা নামে
এক বৃদ্ধ নিহত হন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *