Google Alert – কুকি চিন
ছবির উৎস, Collected
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের সড়ক অবরোধ আর প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারা উপজেলায় ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষে অন্তত তিন জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
আজ রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মেজরসহ তেরো জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসিসহ তিন জন পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে।
তিন জন নিহত ও অনেকের আহত হওয়ার এই ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে, সংঘর্ষের পর গুইমারা উপজেলায় মারমাদের বাজার হিসেবে পরিচিত রামসু বাজারে দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও গুলিতে আহত কিছু ব্যক্তির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
জুম্ম ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, সংঘর্ষের সময় পাহাড়িদের বাড়িঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় বাঙ্গালিরা এসব ঘটনার জন্য পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করছে।
সংঘর্ষের সূচনায় ‘কয়েকজন সেনা সদস্যের ওপর হামলা হয়েছে’ – এমন খবর সামাজিক মাধ্যমে একটি পক্ষ প্রচার হলেও আইএসপিআর কিংবা জেলা প্রশাসন এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি।
বেলা তিনটার দিকে জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে, সহিংসতার খবর পেয়ে তিনি ও পুলিশ সুপার গুইমারার দিকে রওনা হয়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা অবশ্য জানিয়েছেন, সদর থেকে গুইমারার পথে পথে আন্দোলনকারীদের ব্যারিকেড থাকায় বেলা পাঁচটা পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তারা গুইমারা গিয়ে পৌঁছাতে পারেননি।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’।
ছবির উৎস, Collected
গুইমারায় সংঘর্ষ, আগুন
স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, খাগড়াছড়িতে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে ডাকা কর্মসূচি হিসেবে আগের ঘোষণা অনুযায়ী জুম্ম ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সমর্থকরা গুইমারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলেন।
সকাল দশটার দিকে সেনাসদস্যরা সেখানে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে সন্দেহভাজনদের আটকের পরও কেন সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে, তা নিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলছিলেন।
এরই এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা গেছে। এসময় অনেকগুলো দোকানপাটে আগুন জ্বলতেও দেখা গেছে। এসময় ইট- পাটকেলে বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা কেউ কেউ আগুনের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে লাইভ ভিডিও করেছেন।
মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সভাপতি উয়াফ্রে মারমা বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “রামসু- মারমাদের বাজার। সেখানে আমাদের ঘরবাড়ি দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক গুলি হয়েছে। এখনো অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে”।
তিনি রামসু বাজারে হামলা ও সংঘর্ষের জন্য ‘সেটেলার বাঙ্গালিদের’ বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মো: আব্দুল মজিদ।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড করছে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলো। বাঙ্গালিদের ওপর হামলা হচ্ছে। বাঙ্গালিদের বহু দোকান লুট হয়েছে”।
তবে উয়াফ্রে মারমার দাবি, পাহাড়িদের ওপর হামলা করে উল্টো সেনাসদস্য ও বাঙ্গালিদের ওপর হামলার এ ধরনের অভিযোগ তোলা সেখানকার নিয়মিত ঘটনা।
থমথমে পরিস্থিতি, সড়ক অবরোধ
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি সদরে আজ নতুন করে কোনো সংঘর্ষ না হলেও পরিস্থিতি থমথমে হয়ে আছে এবং শহর জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ডাকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় আজ সকাল থেকেই রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
শহরের অধিকাংশ দোকানপাটই আজ বন্ধ দেখা গেছে এবং শহরে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।
গত মঙ্গলবার রাতে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন বলে এ ঘটনায় দায়ের করার মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ একজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে।
বুধবার থেকে জুম্ম ছাত্র- জনতা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। তাদের ডাকে বৃহস্পতিবার আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।
পরে শুক্রবার নারী নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ পালন করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় সমাবেশ চলাকালে খাগড়াছড়ি সদরে চেঙ্গি স্কয়ারে সেনাবাহিনীর গাড়িতে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এরপর শনিবার সকাল সন্ধ্যা অবরোধ ডাকা হয়। সেদিন পিকেটিং চলাকালে বাঙ্গালিদের একটি দল বাধাপ্রাপ্ত হলে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এ ঘটনার জেরে দুই পক্ষের লোকজন মুখোমুখি হয়ে গেলে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
ছবির উৎস, Getty Images
সেদিনে বেলা সাড়ে বারটার থেকে চারটা পর্যন্ত সদরের চারটি পয়েন্টে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এ সময় কেউ কেউ ফাকা গুলি করছে এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আসে। বেলা দুইটার পর সদর, পৌর এলাকা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে স্থানীয় একটি বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার খবর আসলে মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ আবার রাস্তায় নেমে আসলে আবারো স্থানীয় বাঙ্গালিদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
তবে সন্ধ্যার পরেই পরিস্থিতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
আজ রবিবার আবার সড়ক অবরোধের কর্মসূচি পালন করছিলো ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে থাকা আন্দোলনকারীরা।
এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় সড়কে তারা ব্যারিকেড দেয়। গুইমারা উপজেলায় এই অবরোধকে কেন্দ্র করেই সেনাসদস্যদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়েছে আন্দোলনকারীদের।
এরপর সেনাসদস্যরা মাইকে সবাইকে শান্ত থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের আহবান জানায়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়ে এবং এর মধ্যে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে হামলা ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়।
স্থানীয় বাঙ্গালিদের দাবি, তাদেরও কিছু বসতবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ প্রশাসন এখনো তা নিশ্চিত করেনি।
ওদিকে খাগড়াছড়িতে আজ এক সভায় সাম্প্রতিক সময় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
তিনি বলেছেন, ধর্ষণকারী, নারী নির্যাতনকারী, অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।