খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা: গুলশানে নেতাকর্মীদের ভিড়

Bangla Tribune

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাজনিত লন্ডন সফরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে গুলশান এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশানের বাসা ফিরোজাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সরেজমিন নেতাকর্মীদের ভিড় সামলাতে কোনও উদ্যোগও দেখা যায়নি।

বিএনপির বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ইতোমধ্যে গুলশান থেকে বিমানবন্দরের দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা পথে পথে অবস্থান নিয়েছেন। সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়।

এরপর মধ্যরাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা পৌঁছান, সড়কে অবস্থান না নিয়ে ফুটপাতে অবস্থান নিতে। আর এই নির্দেশনার পুরো উল্টো চিত্র বিরাজ করছে গুলশান-২ এলাকায়। পুরো গুলশানসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহনে ধীর গতি এসেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার গণমাধ্যমে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ রাত ৮টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুর থেকে আগ্রহী নেতাকর্মীরা ফিরোজার দিকে অবস্থান নেন। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাসায় যান। বেরিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করতে পারেননি।

সরেজমিন বাংলা ট্রিবিউনের ভিডিও প্রতিবেদক মো. মাসুম জানান, রাত ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। বাসভবনের সামনে পুলিশ থাকলেও ভিড় ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে চলেছে।

দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বুধবারে তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে আশা করছে দল ও পরিবার। সোমবার সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, যুক্তরাজ্যে পৌঁছে ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া।

মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন খালেদা জিয়াসহ তার চিকিৎসক, পরিবার ও কাজের সহকারীরা। বিমানে রয়েছেন কাতারের সরকারি চিকিৎসকদের একটি দল।

বিএনপির মিডিয়া সেল ও চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানে থাকা কাতারের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান চেয়ারপারসন উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী।

গুলশানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড়। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

এর আগে ২০১৭ সালে লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কয়েক মাস অবস্থান করে ওই বছরের অক্টোবরে তিনি দেশে ফেরেন। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করছে তার আমেরিকা যেতে হবে কিনা।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পন্ন ও সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করছে তার সৌদি আরব সফর। ফেরার পথে তিনি সৌদি আরবে যাবেন কিনা, এ নিয়ে অবশ্য আলোচনা আছে। তবে বিমান সহায়তা যেহেতু কাতার থেকে এসেছে, সে ক্ষেত্রে সৌদি আরবের বিষয়ে চেয়ারপারসনের পরিবারের সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত এক মাসে কয়েকটি দিনক্ষণ পাল্টাতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একাধিকবার দিনক্ষণ নির্ধারণ করেও সফরের সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি চিকিৎসকরা।

ডা. জাহিদ হোসেনের ব্যাখ্যা, আমাদের এমনও হয়েছিল, আমরা ডেট করে ফেলেছিলাম, কিন্তু সেই ডেট ডিফার করতে হয়েছে ডিউ টু হার হেলথ কন্ডিশন।

বিমানবন্দরে সিনিয়র নেতারা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের সিনিয়র নেতারাও খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দরের পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যখন থেকে বলা হচ্ছিল তখন যদি ম্যাডাম যেতে পারতেন, তাহলে আরও সহজ হতো চিকিৎসা। আমরা সবাইসহ দেশবাসী দোয়া করি, তিনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন আমাদের মাঝে। আমরা দোয়া করি, তার চিকিৎসা যেন সফল হয়।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, লন্ডনযাত্রার আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাবেন। 

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রাকে কেন্দ্র গত ৫ জানুয়ারি তার বাসায় যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। রাতে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘একসঙ্গে কাজ করো; জনগণের পক্ষে কাজ করো; গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করো।’

৫ জানুয়ারি এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। গত ২ জানুয়ারি ফিরোজায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সস্ত্রীক সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগছেন।

 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *