গণঅভ্যুন্থানে স্বৈরশাসক হাসিনার পালানোর দিন আজ

Google Alert – সেনাবাহিনী

৫ আগস্ট, ২০২৪। কেউ বলেন গণঅভ্যুত্থান, কারো কাছে লাল বিপ্লব, কারো কাছে বাংলা বসন্ত। গত বছরের এই দিনে গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। জনরোষ থেকে বাঁচতে পালিয়ে গেছেন প্রভাবশালী সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ছাত্র জনতার রক্তে হাত রাঙ্গানো পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এই দিনেই কারফিউ ভেঙ্গে রাজপথে নেমে আসে জনস্রোত। ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় চেপে বসা আর বিরোধী মতের মানুষ নিধনের সকল কূটচালের পরিসমাপ্তি ঘটে  হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত বিজয়ে।

পৃথিবীর নানা দেশে স্বৈরাচার পতনের ইতিহাস নতুন নয়। কিন্তু সরকারের পতনের পর সরকার প্রধানসহ একসাথে ৩শ সংসদ সদস্য পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, তাবৎ দুনিয়ায় বিরল। শুধু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই নন, যারাই গত ১৬ বছর শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন, এমন ব্যক্তি মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে মন্দিরের পুরোহিত, আন্দোলনের মুখে পালিয়ে গেছেন সবাই। আর এমনই বিরল ঘটনার সাক্ষী হয় বিশ্ববাসী। 

চব্বিশের ৫আগস্ট সকাল থেকেই সমগ্র ঢাকায় সুনসান নিরবতা। তখনো কেউ জানে না পূর্ব ঘোষিত মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে। সারাদেশে তখন চলছে কারফিউ। টানা কয়েকদিনের আন্দোলনে সড়কে পড়ে আছে ধ্বংসযজ্ঞের নানা চিহ্ন। দুপুরে ঢাকা অভিমুখে ধেয়ে আসা জনস্রোতের খবর সর্ব প্রথম সরাসরি প্রচারিত হয় বাংলাভিশনে। যে খবরে চারদিক থেকে নেমে আসে মানুষ।

একদিকে চলছে কারফিউ। অন্যদিকে মারমুখী অবস্থানে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। যাত্রাবাড়ি, চানখারপুল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত্বর, শাহবাগ, আমিনবাজার ও মোহাম্মদপুরে তখনো চলে পুলিশের নির্মম গুলিবর্ষণ। পুলিশের ল্যাথাল উইপন এর সামনে বুক চিতিয়ে সেদিনও জীবন দিয়েছে অগনিত মানুষ।  

মানুষের মনে নানা কৌতুহল। কী ঘটতে যাচ্ছে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে? কে জানতো, এই দিনেই দেশ ছেড়ে পালাবেন শেখ হাসিনা? অথচ গণভবনে বসে তখনও ছাত্র জনতার উপর গণহত্যা চালানোর নীলনকশা আঁকতে থাকেন রক্তপিপাসু লেডি অব মাফিয়া। তার সেই নীলনকশা ভেস্তে যায় সেনাবাহিনী গুলি চালাতে অপারগতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। উল্টো হাসিনাকে পালাতে ৪৫ মিনিট সময় বেধে দেয় সামরিক বাহিনী। এরপর সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে এয়ারপোর্টে গিয়ে বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমানে ভারতে পালিয়ে যায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। হাসিনার এমন পালিয়ে যাওয়ার তথ্য তখনও জানে না পুলিশ। তাই পালানোর পরেও ছাত্র-জনতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তারা। এরইমধ্যে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার ঘোষণা দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। দেড়টার দিকে রাস্তা ছেড়ে দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

বেলা দুইটার দিকে হাসিনা পালিয়ে যাবার খবরে রাজপথে নামে জনতার ঢেউ। যে ঢেউ চুর্ণবিচুর্ণ করে দেয় স্বৈরাচারের মসনদ। ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে ভাসতে থাকে আনন্দের জোয়ারে।  রাষ্ট্রের ওপর ১৬ বছর চেপে বসা জগদ্দল পাথর সরে যাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে সৃষ্টিকর্তার কাছে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে মানুষ। বিকাল চারটায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট ফর্মের ঘোষণা দেন। 

এভাবেই স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় বাংলাদেশ। বুক ভরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে থাকে মানুষ। মাত্র আড়াই সপ্তাহে ছাত্র-জনতার রক্ত-কালি দিয়ে ঢাকা এবং সারা দেশের রাজপথে লেখা হয় এক বিরল ইতিহাস। 

 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *