গত বছরের চেয়ে এবার দেশে দুর্গাপূজার আয়োজন বাড়ছে ১৮৯৪টি

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

চলতি বছর সারা দেশের ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর যা ছিল ৩১ হাজার ৪৬১টি। সেই হিসাবে এবার পূজার আয়োজন বাড়ছে এক হাজার ৮৯৪টি।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানিয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।

সভায় মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, এবার ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা হবে। যা গত বছরের চেয়ে সাতটি বেশি।

পূজার সূচি হিসেবে জানানো হয়, আগামীকাল শনিবার দুর্গাপূজার বোধন, রোববার মহাষষ্ঠী, সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী, বুধবার মহানবমী ও বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী। দশমীর দিন বিকেল ৩টায় ঢাকাসহ সারা দেশে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। এবার দেবীর আগমন গজে, গমন দোলায়।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে বক্তব্যে বলা হয়, এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র এবং ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পূজা আয়োজনের নানা দিক আলোচনায় এসেছে। আয়োজকেরা তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরেছেন। দুই উপদেষ্টা সুন্দরভাবে পূজা আয়োজনের কথা জানিয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।

মণ্ডপে হামলা

দেশে বিভিন্ন মণ্ডপে এরই মধ্যে হওয়া হামলার চিত্র তুলে ধরে জয়ন্ত বলেন, দুর্গাপূজার প্রস্তুতির মধ্যেই ১৩ জেলায় দুর্গাপ্রতিমা ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। জেলাগুলো হলো কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জামালপুর, নাটোর, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত এসব ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্বৃত্তদের অনেকে ধরা পড়েছে। পূজার মধ্যে তারা এমন হামলা দেখতে চান না।

জয়ন্ত জানান, শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ নয়, রাষ্ট্রের আলোকিত চেতনা ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে এ সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে। পূজার পাঁচ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে চাইলে ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। দুর্বৃত্তদের বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- এমনটি তারা দেখতে চান।

দাবি-দাওয়া

মতবিনিময়ে জানানো হয়, দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপ কিংবা প্যান্ডেলে দুটি দাবি তুলে ধরতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এগুলো হলো- সারা দেশে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নেতৃত্ব ও নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে অসত্য, ঢালাও, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা পূজার আগে প্রত্যাহার এবং সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জোরপূর্বক পদচ্যুতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

অনুষ্ঠানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ-অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ, ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যর্পণ এবং জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকার, সংসদ, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সব সংস্থায় অংশীদারত্ব-প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

আরও দাবি জানানো হয়- দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর করাসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমীতে তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।

দিকনির্দেশনা

মতবিনিময় থেকে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। যার মধ্যে আছে পূজার আয়োজন-উদ্‌যাপনে স্থানীয় প্রশাসন, সব রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রনেতাদের সম্পৃক্ত করা; দশমীর দিন ২ অক্টোবর যথানিয়মে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করা এবং দুর্গম এলাকায় পূজার আয়োজন স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে আয়োজকদের স্থির করা।

এছাড়া উচ্চ শব্দে মাইক ও পিএ সেট বাজানো ও আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয় সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান বাজানো যাবে না। কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং-ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে, প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে।

বিচারহীনতা দূর

অনুষ্ঠানে প্রতিমা প্রস্তুতকালে মন্দিরে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়টি তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা কিছু ছড়িয়ে দিয়ে, ধর্ম বিদ্বেষের ভুয়া-মিথ্যা বার্তা দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা করা হচ্ছে এটা ২০০৯-১০ সাল থেকে শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনাটিসহ এসব ঘটনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তুলে ধরার কথা জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছেন কঠোর অবস্থানে থাকবেন, আমাদের আস্বস্ত করেছেন। এর মধ্যে বেশকিছু এলাকায় প্রতিমা এবং মন্দিরে হামলার ঘটনার পর অনেক দুর্বৃত্ত ধরা পড়েছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যাচ্ছে, প্রশাসন পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমরা এটাই চেয়েছিলাম। হামলা দুর্বৃত্তরা করতেই পারে, কিন্তু এটার বিচার হচ্ছে কি না, দুর্বৃত্তরা ধরা পড়ছে কি না এটাই আমাদের দেখার বিষয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা নানাভাবে দেখেছি গত ৫৩ বছর। আমরা চাই না এই সংস্কৃতি অব্যাহত থাকুক ‘

বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে এ বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও ধর্ম উপদেষ্টা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), মহানগর পুলিশ কমিশনার এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান বাসুদেব। তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেই সংস্কৃতির মৃত্যু ঘটুক। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এবং তাদের আশ্বাসের বিভিন্ন প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি।’

প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে কোনো উৎকণ্ঠা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি জানান, বিভিন্ন জেলা এবং ঢাকায় যেসব স্থানে বিসর্জন দেওয়া হয় বিশেষ করে বুড়িগঙ্গায় অত্যন্ত সুন্দর ব্যবস্থা গতবারও ছিল, এবারও সরকারের তরফ থেকে তা করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা এতে সহযোগিতা করছে। সবাই চাচ্ছে যাতে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান হয়। ফলে সে অর্থে উৎকণ্ঠা নেই। সবাই পূজার আয়োজনের পাশে রয়েছেন।

আজকালের খবর/  এমকে

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *