গাজায় অনাহারে মৃত্যু ২০০ ছুঁইছুঁই 

Samakal | Rss Feed


গাজায় অনাহারে মৃত্যু ২০০ ছুঁইছুঁই 

বিশ্ব

সমকাল ডেস্ক

2025-08-08

ইব্রাহিম আল নজ্জর পেশায় ট্যাক্সিচালক। ইসরায়েলের হামলার জেরে সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু। অনাহার-অপুষ্টিতে ভুগছে সন্তানরা। এরই মধ্যে পাঁচ বছরের ছেলে নাঈম না খেতে পেয়ে মারা গেছে। ইব্রাহিম রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি সন্তান সাঈমের কথা ভুলতে পারি না। শেষ এক মাস সে অচেতন অবস্থায় ছিল। অথচ একসময় সে-ই ছিল বেশ সবল ও স্বাস্থ্যবান।’

এটা শুধু ইব্রাহিমের গল্প নয়, এটা গাজা উপত্যকার প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র ও অস্থায়ী আবাসে থাকা লাখ লাখ অসহায় বাবার। তারা চোখের সামনে সন্তানদের অনাহার, আর্তনাদ ও মৃত্যু দেখছেন। কার্যত ফিলিস্তিনিরা ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। সম্প্রতি উপত্যকায় বিমান থেকে খাবার ফেলা হচ্ছে। অল্পসংখ্যক ত্রাণের ট্রাকও পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। গাজার বহু মানুষের এখন ত্রাণকেন্দ্রে গিয়ে খাবার আনার শারীরিক সামর্থ্যটুকুও নেই। 

গতকাল বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকায় একের পর এক ইসরায়েলি হামলায় দিনভর শিশুসহ অন্তত ২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ ছাড়া অনাহার-অপুষ্টিতে আরও চারজনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে গাজায় অনাহারে মৃতের সংখ্যা ১৯৭ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৯৬। আলজাজিরা জানায়, এদের মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের আল নাসির হাসপাতালে একটি শিশু মারা গেছে। দুই বছরের একটি মেয়ে মারা গেছে আল মাওয়াসি এলাকায়।  

ত্রাণ সরবরাহ অবাধ করার কোনো আন্তর্জাতিক আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না ইসরায়েল। দেশে দেশে বিক্ষোভ হলেও তা আমলে নিচ্ছে না। লাগামহীন মৃত্যুক্ষুধায় বেপরোয়া ইসরায়েল। এ অবস্থায় গাজার পরিস্থিতি আরও খাবার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে নিহতের মিছিল। খাবার বিতরণের নামে ইসরায়েল গাজাসহ বিশ্ববাসীর সঙ্গে তামাশা করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গড়ে তুলেছে কথিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। সশস্ত্র এ সংগঠনের ত্রাণকেন্দ্রে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। কাউকে পছন্দ না হলেই গুলি করছে– হোক সে শিশু কিংবা বৃদ্ধ।

মানবতার নামে গড়ে তোলা নৃশংস হত্যাকারী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়েছে চিকিৎসকদের বৈশ্বিক সংগঠন এমএসএফ। কিন্তু কে কাকে নিষিদ্ধ করবে। সংগঠনটি গড়ে উঠেছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই সহযোগিতায়। শুল্কযুদ্ধ, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি মতো বিষয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে সামনে আনা হচ্ছে, যাতে আড়াল পড়ে ভয়াবহ এক গণহত্যার দৃশ্য। বিশ্ববাসীর সামনে এ গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার এমএসএফ সামাজিক মাধ্যমে বলেছে, তারা ৫৪ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কখনও নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে এমন পদ্ধতিগত নৃশংসতা দেখেনি। এটা কোনো মানবিক ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্র নয়। এখানে অমানবিকতা ও পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চলছে।

চাষযোগ্য জমি

জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ এখন মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। গত এপ্রিলেও তা ছিল ৪ শতাংশ। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর আগে তা ছিল কৃষির জন্য বিখ্যাত। ফিলিস্তিনিরা বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি, বাদাম ও অন্যান্য ফসল চাষ করতেন। জাতিসংঘের খাবার ও ‍কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও বলছে, উপত্যকার অর্থনীতির ১০ শতাংশ আসত কৃষি থেকে।

ইসরায়েলে বিক্ষোভ

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ চেয়ে বিক্ষোভ করছেন ইসরায়েলের বাসিন্দারা। হারেৎজ অনলাইন জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের স্বজন বিক্ষোভ করেন। এ অবস্থায় ইসরায়েলে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সিমন ওয়াল্টার্স বলেছেন, গাজায় আর যুদ্ধ বাড়ানো হবে বড় ধরনের ভুল। ইউরোপীয় কমিশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট টেরেসা রিবেরা বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল যা করছে, তা অনেকটাই গণহত্যা। সেখানে লক্ষ্যে পরিণত করে হত্যা করা হচ্ছে; মারা হচ্ছে অভুক্ত রেখেও। 

© Samakal

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *