গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার মুহুর্তেই ইসরাইলের হামলায় নিহত ৫০

Google Alert – সেনা

টাইমস অব ইসরাইল,এএফপি,গাজা সিটি, রয়টার্স: ইসরায়েল গত শনিবার বলেছে, তারা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলেছে। পাশাপাশি দেশটি ত্রাণসহায়তার জন্য মানবিক করিডর খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। ফিলিস্তিনি এ ভূখণ্ডে খাদ্যসংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল এ কথা জানাল। গত ২ মার্চ গাজার ওপর পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। মে মাসের শেষ দিকে দেশটি আবার স্বল্প পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ চালু করার অনুমতি দেয়।

ত্রাণ সরবরাহের পথ সহজ করার সিদ্ধান্ত এসেছে এমন একটা সময়ে, যখন ইসরায়েলি হামলায় ও গুলিতে ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ খবরটি জানিয়ে ফিলিস্তিনি বেসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর বলেছে, নিহতদের একাংশ হামলার সময় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে অবস্থান করছিলেন। একই দিন অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) একটি জাহাজকে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, গাজা উপত্যকায় ত্রাণ পাঠানোর চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা আকাশ থেকে এক দফা ত্রাণসামগ্রী ফেলার কাজ সম্পন্ন করেছে। এর আগে ইসরায়েল বলেছে, জাতিসংঘের ত্রাণবাহী গাড়িবহরগুলো যাতে গাজায় খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে পারে, সে জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ইচ্ছাকৃত দুর্ভিক্ষ ঘটানোর মিথ্যা দাবি খণ্ডন হবে। ইতিমধ্যে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, আজ রোববার সকালে গাজার নির্দিষ্ট অংশে ত্রাণ বিতরণ সহজ করতে ‘মানবিক বিরতি’ কার্যকর হবে। তবে মানবিক সহায়তা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যসংকট মোকাবিলায় আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ যথেষ্ট নয়। স্থলপথে আরও বেশি ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।

ইসরায়েল সাত দফা ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বলেছে, তারাও গাজায় আকাশ থেকে আবারও ত্রাণ ফেলবে। যুক্তরাজ্য বলেছে, দেশটি গাজায় ত্রাণ সরবরাহে জর্ডানসহ সঙ্গীদের নিয়ে ইউএইকে সহায়তা করবে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সম্প্রতি মানবিক পরিস্থিতি ভীষণভাবে খারাপ হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শিশুদের মধ্যে চরম অপুষ্টির বিষয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৭৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা লড়াই বন্ধ রাখার ঘোষণা ইসরাইলের : গাজা উপত্যকার কিছু জায়গায় চলমান যুদ্ধে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। আজ রোববার এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, এতে গাজায় ক্ষুধার সমস্যা মেটাতে জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো সড়কপথে নিরাপদে খাবার ও সহায়তা পাঠাতে পারবে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেন গাজায় আরও বেশি ত্রাণ প্রবেশ করানো যায়।

জাতিসংঘ বা গাজায় কাজ করা ত্রাণ সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে কিছুসংখ্যক মানবিক সহায়তাকর্মী ব্যক্তিগতভাবে সংশয় প্রকাশ করেছেন। মাঠে ইসরায়েলি ঘোষণার বাস্তবায়ন কীভাবে হচ্ছে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। সাময়িক লড়াই বন্ধ রাখার এ ঘোষণা নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় কার্যকর হবে। যেমন আল মাওয়াসি, দেইর আল বালাহ ও গাজা নগরী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, এসব এলাকায় বর্তমানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ আছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তারা গাজা উপত্যকায় উড়োজাহাজ থেকে খাবার ফেলতে শুরু করেছে। ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও অস্বীকার করেছে তারা।

সাময়িক লড়াই বন্ধ রাখার এ ঘোষণা নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় কার্যকর হবে। যেমন আল মাওয়াসি, দেইর আল বালাহ ও গাজা নগরী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, এসব এলাকায় বর্তমানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ আছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজার মধ্যে কিছু নিরাপদ রাস্তা খুলে দিয়েছে, যাতে জাতিসংঘ আর ত্রাণ সংস্থাগুলো খাবার আর ওষুধ নিয়ে নিরাপদে যেতে পারে এবং সেগুলো মানুষদের মাঝে বিতরণ করতে পারে।

গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সতর্কতা : গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলাকে অদ্ভুত বিভ্রান্তি বলে সতর্ক করেছেন ত্রাণ সংস্থাগুলোর নেতারা। এই ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান অনাহারের সংকট নিরসনে কোনও ভাবেই কার্যকর নয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল রবিবার সকালে জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা বিমান থেকে ফেলেছে। তাদের এমন দাবির প্রতিক্রিয়ায় এ সতর্কবার্তা দিলেন ত্রাণ সংস্থাগুলোর নেতারা। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং জর্ডান আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার পরিকল্পনা করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, গাজায় বিমানপথে ত্রাণ পাঠাতে ব্রিটিশ সরকার ‘যা কিছু সম্ভব, সব করছে।’

তবে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) কিয়ারান ডনেলি বলেছেন, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা ‘প্রয়োজনীয় পরিমাণ বা গুণগত মানের ত্রাণ সরবরাহ করতে পারে না।’ শতাধিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠন সতর্ক করেছে যে, গাজায় ব্যাপক অনাহার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার বিষয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে মূলত স্থলপথে ত্রাণ প্রবেশ ব্যর্থ হওয়ার কারণে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি শনিবার বলেছেন, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা ‘ব্যয়বহুল, অকার্যকর এবং কখনও কখনও ভুল হলে না খেয়ে থাকা বেসামরিক মানুষদের মেরে ফেলতেও পার।’

সাঁজোয়া যানে বিস্ফোরণে দুই ইসরাইলি সেনার মৃত্যু : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে সাঁজোয়া যানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে হামাসের যোদ্ধারা। গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে দুই সেনার মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। নিহত সেনারা হলেন ক্যাপ্টেন আমির সাদ (২২) এবং সার্জেন্ট ইনন নুরিয়েল ভানা (২০)। তারা দুজনই গোলানি বিগ্রেডের নজরদারি ইউনিটে কর্মরত ছিলেন।

আইডিএফ তাদের প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানিয়েছে, নিহত সেনারা একটি নামির সাঁজোয়া যানের ভেতর বসা ছিলেন। ওই সময় সেটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, হামাসের যোদ্ধারা সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর যে পথ দিয়ে এপিসি চলাচল করে সেখানে বিস্ফোরণ পুঁতে রাখে। সাঁজোয়া যানটি সেখানে আসা মাত্র বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দুই সেনা নিহত এবং এক কর্মকর্তা আহত হন। এ ঘটনার পর আরেকটি সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে হামাসের যোদ্ধারা বোমা নিক্ষেপ করে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে ওই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি। এতে করে দ্বিতীয় সাঁজোয়া যানের কোনো সেনা হতাহত হয়নি। যে সাঁজোয়া যানে দুই সেনার মৃত্যু হয়েছে সেটিতে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটল সেটির আসল কারণ জানতে তদন্ত চলমান আছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। এরআগে গতকাল শনিবার আহত এক সেনার মৃত্যু হয়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *