Bangla Tribune
গাজায় আটক দুই ইসরায়েলি জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, এক জিম্মি গাজা সিটিতে আটক রয়েছেন এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা করছেন। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে ওই এলাকায় বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
দুই জিম্মির একজনের নাম গাই গিলবোয়া-দালাল। অপরজন আলন ওহেল। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে একটি সঙ্গীত উৎসব থেকে আটক হয়েছিল তারা। এই দুজন এখনও হামাসের হাতে বন্দি থাকা ৪৮ জনের মধ্যে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনও জীবিত আছেন।
ভিডিওটি সম্পাদিত, যেখানে ক্লান্ত গিলবোয়া-দালাল প্রায় সাড়ে তিন মিনিট কথা বলেন। ভিডিওটির কিছু অংশে তাকে একটি গাড়ির ভেতরে দেখা যায়, যার তারিখ দেওয়া আগস্ট ২৮। তবে রয়টার্স স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি ভিডিওটি কবে রেকর্ড করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, তিনি গাজা সিটিতে অন্য কয়েকজন জিম্মির সঙ্গে আটক রয়েছেন এবং আশঙ্কা করছেন যে ইসরায়েলের অভিযানে তিনি মারা যেতে পারেন।
ইসরায়েল গত ১০ আগস্ট থেকে গাজা সিটির বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযান শুরু করে। তারা বলছে, এটি হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি। বৃহস্পতিবার এক ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র জানান, তারা বর্তমানে শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। যুদ্ধ শুরুর আগে এই শহরে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করতেন।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার ইসরায়েল শহরের একাধিক বহুতল ভবনে বোমা বর্ষণ করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সেদিন সেনা অভিযানে গাজাজুড়ে ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জন গাজা সিটিতে।
ভিডিওতে গিলবোয়া-দালালকে একটি গাড়ির পেছনের আসনে বসা অবস্থায় দেখা যায়, গাড়িটি শহরের মধ্যে ঘুরছিল। গাড়িটি কিছু ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি একটি ভবনকে রেড ক্রসের বলে শনাক্ত করেন। তবে হামাস জিম্মিদের রেড ক্রসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে অস্বীকার করেছে।
ভিডিওর একপর্যায়ে ২৪ বছর বয়সী ওহেলকেও দেখা যায়।
ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েলি বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি আলোচকদের আহ্বান জানান জিম্মি মুক্তির জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করতে। এখন পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের সবাই যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছেন। তবে জুলাই মাসে সর্বশেষ আলোচনা ভেস্তে যায়।
কট্টর-ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, এর জবাবে ইসরায়েলের উচিত পুরো গাজা দখল করা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, সামরিক নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ সম্প্রসারণ না করতে সতর্ক করেছে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেনারা গাজা সিটির উপকণ্ঠে অগ্রসর হয়েছে।
হামাস বলেছে, তারা জুলাইয়ের প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি, যেখানে কিছু জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চাওয়া হয়েছিল। তবে নেতানিয়াহু সব জিম্মি মুক্তি ও হামাসের আত্মসমর্পণ ছাড়া কোনও সমঝোতা চান না।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে ২৫১ জন জিম্মিকে গাজায় নিয়ে যায়। তাদের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়। এর জবাবে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই ভূখণ্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং মানুষ ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে।