গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু, শহর ছেড়ে পালাচ্ছে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি

Google Alert – সামরিক

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পরিকল্পিত স্থল অভিযানের প্রথম ধাপ শুরু করার পর থেকে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি গাজা সিটি থেকে পলায়ন করছে বলে শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। টানা কয়েকদিনের তীব্র বোমা হামলা এবং গোলাবর্ষণের পর ইসরায়েলি সেনারা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থান নিয়েছে, যেখানে দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির বসবাস। খবর বিবিসি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন একটি আক্রমণ যা ‘অনিবার্যভাবে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ’ ডেকে আনবে, তা এড়ানো প্রয়োজন।

ইসরায়েলের একজন সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে জেইতুন এবং জাবালিয়া এলাকায় সেনারা এরইমধ্যে কাজ করছে। মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন।

আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুতেই প্রায় ৬০ হাজার ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হচ্ছে, যাতে নিয়মিত সেনা সদস্যরাও এই অপারেশনে অংশ নিতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি গাজায় ‘শেষ সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলো দখলের জন্য সময়সীমা কমিয়ে আনছেন।

এক বিবৃতিতে হামাস নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ‘গাজা সিটির নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংস যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনেছে। পাশাপাশি তারা আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতি তার ‘অবহেলা’র সমালোচনা করেছে। ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরিকল্পনার জবাব দেয়নি।

ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গাজা সিটির কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নিয়ে গাজার দক্ষিণের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের অনেক মিত্র দেশই এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। বুধবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ সতর্ক করে বলেন, এটি উভয় জাতির জন্য কেবল বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং পুরো অঞ্চলকে স্থায়ী যুদ্ধের চক্রে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।

এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস জানিয়েছে, আরো বেশি সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া এবং সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি গাজার ২১ লাখ মানুষের জন্য এরইমধ্যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করবে।

গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েলি সরকার পুরো গাজা উপত্যকা দখল করার উদ্দেশ্য ঘোষণা করে।

বুধবার টেলিভিশনে এক ব্রিফিংয়ে আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, ২২ মাসের যুদ্ধের পর হামাস ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজা সিটিতে হামাসের আরো বেশি ক্ষতি করব, কারণ এটি এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সরকারি ও সামরিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র। আমরা মাটির ওপরে এবং নিচে থাকা সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করব এবং হামাসের ওপর জনগণের নির্ভরশীলতা শেষ করে দেব।’

তিনি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে গাজা সিটির বেসামরিক জনগণকে তাদের নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেয়ার সতর্কবার্তা দেয়া হবে।

মঙ্গলবার গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, শহরের জেইতুন এবং সাবরা এলাকায় পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং অসহনীয়।

সংস্থাটি জানায়, বুধবার ইসরায়েলি হামলা ও গোলাবর্ষণে পুরো ভূখণ্ডে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন শিশু এবং তাদের বাবা-মাও রয়েছেন।

ডেফরিন বলেন, হামাসের হাতে এখনো বন্দি থাকা ৫০ জন জিম্মিকে রক্ষা করতেও আইডিএফ সম্ভাব্য সবকিছু করছে। বন্দিদের মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় এই হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এতে গাজায় অন্তত ৬২,১২০ জন নিহত হয়েছে বলে ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *